পূর্ব মেদিনীপুর জেলার 244 বছরের প্রাচীন মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রা ইতিমধ্যে করোনা আতঙ্কের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের তরফ থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর বদলে প্রভু জগন্নাথ রাজবাড়ির কূদদেবতা পালকি চড়ে গেলেন মাসির বাড়ি। তবে প্রাচীন সমস্ত রীতিনীতি মেনে চলা হবে। আজ সকাল থেকে মহিষাদল রাজবাড়ি সমস্ত রীতিনীতি মেনে বিকেলে পালকি চড়ে প্রভু জগন্নাথ দেব ও রাজবাড়ির কূলদেবতা গেলেন নিজের মাসি বাড়ি। করোনা আতঙ্কের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের তরফ থেকে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়েছে। যাতে বেশি পরিমাণে ভিড় না জমে এজন্য পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি ছিল তুঙ্গে। মঙ্গলবার বিকেলে পালকি চড়ে ছবি জগন্নাথ যাওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন রাজপরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ ও শঙ্কর প্রসাদ গর্গ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিউলি দাস সহ-সভাপতি তিলক কুমার চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা। আগামী সাতদিন প্রভু জগন্নাথ নিজের মাসি বাড়িতে কাটানোর পর আবার পালকি চড়ে ফিরবেন নিজের বাড়িতে।
#PuriRathYatra#Jagannthaswami#nayanapathgami🙏👍😆🌸💮🌼😔 pic.twitter.com/I5RFUBZqR1
— aamarsakal.com (@aamarsakal) June 23, 2020
মহিষাদল রাজবাড়ির ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়,রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের সহধর্মিনী ধর্মপ্রাণ রানী জানকি দেবী মহিষাদলের রথের শুভ সূচনা করেছিলেন ছোট্ট একটি রথ দিয়ে। এরপর ১৮০৪ সালে জানকি দেবীর মৃত্যুর পর অল্পকালের জন্য মতিলাল পাঁড়ে মহিষাদলের রাজত্ব ভার গ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি রানীর রথ যাত্রার রীতিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুবিশাল একটি ১৭ চূড়োর রথ তৈরি করান। তারপর থেকেই সেই রথ বৃহৎ আকারে মহিষাদলের উৎসবে পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে রথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা ফের ১৮৫২ সালে রাজা লছমন প্রসাদ গর্গ বাহাদূর কলকাতা থেকে চীনা মিস্ত্রি আনিয়ে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ করে সতেরো চূড়ো রথের সংস্কার করান। এরপর ১৯১২ সালে স্থানীয় শিল্পী মাধব চন্দ্র দে রথের সামনের শ্বেত শুভ্র দুটি কাঠের ঘোড়া দায়িত্ব পেয়ে স্থাপন করেন। যা বর্তমানে এখনো বিরাজমান । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে একের পর এক রথের চূড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ১৭চুড়ার রথ নেমে এসেছে ১৩ চুড়ায়।৩৪টি চাকা বিশিষ্ট মহিষাদল রাজবাড়ির প্রাচীন এই রথের নাম পুরী, মাহেশের পরই জনপ্রিয়তার শিখরে স্থান করে নিয়েছে।
রাজপরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, “করোনা সংক্রামনের কথা মাথায় রেখে আমার রথ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তবে জগন্নাথ পালকি চড়েই নিজের মাসিবাড়ি গেলেন”
সবমিলিয়ে বলা চলে প্রাচীন রীতি নীতি মানা হলেও কোথাও যেন বিষাদের ছায়া জেলাবাসীদের মধ্যে।