লাদাখ সীমান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার চুপ থাকলেও, পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হতে চলেছে। আর উপগ্রহ চিত্রে তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উপগ্রহ চিত্র ও সেনাসূত্র বলছে, গলওয়ান উপত্যকা ছাড়িয়ে চিনা সক্রিয়তা লাদাখের অন্যত্র অনেকটাই ছড়িয়েছে। লাল ফৌজের জমায়েতের খবর আসতে শুরু করেছে গোগরার হট স্প্রিং, প্যাংগং লেক এবং দেপসাং উপত্যকা থেকেও। গলওয়ান উপত্যকায় চিনের নতুন পোস্ট ও নির্মাণও ধরা পড়েছে উপগ্রহ চিত্রে। অর্থাৎ একটা কথা স্পষ্ট, ইন্দো-চিন সামরিক বৈঠকে পিছু হঠার কথা বললেও বেজিং আদৌ সে পথে হাঁটছে না। আর সম্ভবত সেই কারণেই, চিনা সেনার উপস্থিতি নিয়ে সরাসরি ভারত কোনও মন্তব্য করছে না। উল্টে, ১৫ জুন সংঘর্ষের দিন ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেনি, চুক্তি ভঙ্গ করেনি- এ সব মন্তব্যে বার বার দায়টা চাপাচ্ছে চিনেরই কাঁধে। এর মধ্যে আবার চিনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্রি চিনকে নতুন নির্মাণ বন্ধ করার বার্তা দিয়ে পরোক্ষে উপগ্রহ চিত্র ও সূত্রের দাবিকেই মান্যতা দিয়েছেন। সম্প্রতি একটি উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, গলওয়ান উপত্যকায় চিন নতুন কিছু পোস্ট তৈরি করেছে, আর সেটা এমন একটা স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টে, যার ফলে প্যাট্রোল পয়েন্ট-১৪-এর কাছে ভারতীয় সেনার টহলদারি মুশকিল হতে পারে। আর তার ফলে স্ট্র্যাটেজিক ‘ওয়াই-নালা’ ইন্দো-চিন সংঘর্ঘের নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। গলওয়ান নদী যেখানে শায়ক নদীর সঙ্গে মেশার জন্য ওয়াই আকারের বাঁকটা নিয়েছে, চিনের নির্মাণ ঠিক সেখানেই। সেখান থেকে প্যাট্রোল পয়েন্ট-১৪ মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। ওই এলাকায় চিনের পোস্ট থাকলে ভারতের টহলদারিতে বাধা আসতে বাধ্য। প্যাংগং লেক সংলগ্ন এলাকারও বেশ কিছু অংশে চিনা সেনা ঘাঁটি গেড়েছে। লেকের ‘ফিঙ্গার ৮’-এর ওপারে তাদের থাকার কথা, তারা ‘ফিঙ্গার ৪’ পর্যন্ত চলে এসেছে। অর্থাৎ, ভারতের সীমান্তের প্রায় ৮ কিলোমিটার ভিতরে। এর জেরে বাধা আসছে ভারতীয় সেনার টহলদারিতে৷ একই পরিস্থিতি দেপসাং ও দৌলত বেগ ওল্ডি সেক্টরেও৷ ভারত সরাসরি এই নির্মাণের কথা না মানলেও চিনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য প্রকারান্তরে নির্মাণের দাবিকে মান্যতাই দিচ্ছে। চিনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্রি এ দিন বলেন, ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা দ্বন্দ্ব মেটানোর একমাত্র পথ চিনকে সেখানে নতুন নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। ভারতীয় সেনার টহলদারিতে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা নষ্টের যে চেষ্টা চিন করছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তার সুদূরপ্রসারি প্রভাব পড়তে পারে।’ অর্থাৎ কেন্দ্র এবিষয়ে স্পষ্ট বার্তা না দিলেও, একথা পরিষ্কার চিন মুখে সমঝোতা ও শান্তির কথা বললেও, প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করেছে।