শুভ সন্ধ্যা আজকে আমরা কোভিড 19 বা করোনাভাইরাস ডিজিজ এই সম্বন্ধে কিছু আলোচনা, তার সর্তকতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই নিয়ে কিছু কথা বলবার জন্য শ্রীশঙ্খ সেবা ফোরামের পক্ষ থেকে আপনাদের সামনে এসেছি। কোভিড নাইনটিন কথাটির পুরো অর্থ হচ্ছে করোনাভাইরাস ডিজিজ 2019 অর্থাৎ 2019 সালে এই অসুখ এর প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় চীন দেশে উহান সিটিতে। বলা হয় এটি একটি ডিজিজ যা বাদূর থেকে মানুষের দেহে এসেছে। উহান প্রভিন্স এর ওখানে উহান সিটির যে সি ফুড মার্কেট, লাইভ এনিমেল মার্কেট রয়েছে তাদের কাছ থেকে নাকি এই অসুখ ছড়ায়। প্রথমে এখানে যাওয়া লোকজন এবং ট্রেডার্স এর মধ্যে পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে তারপর এই অসুখ ধীরে পুরো শহরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার থেকে আজ যে অবস্থায় আমরা এসেছি সেটা দাঁড়ায়। বহু তর্ক আছে এর মধ্যে। বাদুর থেকে এই অসুখ মানুষের দেহে এসেছে কিনা বা অন্য কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই অসুখ তৈরি হয়েছে কিনা বা এর উৎস কিনা তার মধ্যে আমরা এই মুহূর্তে যাবো না। আমরা যেটা বলতে চাই বা যা আমাদের করণীয় তা হল এই অসুখের প্রভাব থেকে আমরা কিভাবে নিজেদের বাঁচাবো, কিভাবে সুস্থ থাকব। কারণ এখানে সুস্থ থাকা, বাঁচা একার জন্য নয় এই এক জন থেকে আসে সমষ্টি, সমষ্টি থেকে আসে আমার পাড়া, পাড়া থেকে আমার রাজ্য, আমার দেশ। আজকে আপনারা সবাই জানেন ডিসেম্বর মাসের 26 তারিখ নাগাদ প্রথমে এই অসুখ সম্বন্ধে আমরা জানতে পারি। জানুয়ারি 4 তারিখে জেনারেল সিকুয়েন্স ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বলে। তার থেকে আজকে পৃথিবীর প্রায় 206 টি দেশে এই অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে। তাহলে আমরা কোথায়? ভারতবর্ষে অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাড়তে পারে নি। ভারতবর্ষে অসুখ এসেছে তবে আশার আলো কি আছে? হ্যাঁ আশার আলো আছে। ইতালি ও ভারতবর্ষে যখন প্রথম কেস ডিটেকটেড হয় সেই সময় ইতালি ও ভারতবর্ষের কেসের সংখ্যা একই ছিল। কিন্তু আজ আপনারা জানেন ইতালিতে মৃত্যু-মিছিল বয়ে গেছে। প্রায় কুড়ি হাজার ইতালিয়ান মৃত্যুর সংখ্যা। আমরা কিন্তু সেই জায়গায় অন্তত যায়নি। তার থেকে বেটার পজিশনে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র আমেরিকা, ডোনাল্ড ট্রাম্প আঠাশে ফেব্রুয়ারি বলছেন করোনা ভাইরাস একটি গুজব। আমরা সারা পৃথিবীর অধীশ্বর আমেরিকা ভয় পাই না অন্যান্য অসুখের মতন এর সাথে আমরা মোকাবিলা করতে পারব, একে আমরা প্রতিরোধ করে এগিয়ে যেতে পারবো। কিন্তু আজ নিউইয়র্ক মৃত্যু-মিছিল, মৃত্যুপুরী। মানুষের হাহাকার। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না।ইটালি সেকেন্ড ইনদা মেডিকেল ইন্ডেক্স, তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসা দিতে পারেনি । ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক একটি দেশ তারাই অসুখের কাছে হার স্বীকার করেছে। বহু দেশ আছে যার তথ্য বাইরে থেকে আসে না, বলতে পারবোনা সেই সম্বন্ধে। ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, কিছু সত্য আসছে বাইরে কিছু সত্য আসেনি । কিন্তু যে অবস্থায় তারা ছিল অন্তত যদি ধরে নেওয়া যায় ছোট টাই সত্য সেখানেও মৃত্যু সাড়ে তিন হাজারের উপরে। সেই সমস্ত দিক থেকে সরে গিয়ে বিশ্বের ডেভলপিং নেশন ইন্ডিয়া সে কোথায় দাঁড়িয়ে? আমাদের কাছে আজকে অব্দি লেটেস্ট স্ট্যাটিসটিক্স বলছে নাম্বার অফ পজিটিভ 12759, নাম্বার অফ ডেথ চারশো কুড়ি, রিকভার ফিফটিন হান্ড্রেড এন্ড ফিফটি ।এইযে 12759 টি কেস বলা হয় এর মধ্যে যারা সুস্থ হয়ে গেছে তাদেরও ধরা হয়, যে মারা গেছে তাকেও ধরা হয়, যে ভর্তি হয়েছে তাকেও ধরা হয় । মানে এই মুহূর্তে 12800 পজিটিভ পাওয়া গেছে। সমস্ত স্টেট মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো অন্যান্য স্টেট গুলোর থেকে। অ্যারাউন্ড দেড়শো পজেটিভ কেস, প্রশ্নসাপেক্ষ রেপিড টেস্ট করা হবে কিনা রেপিড টেস্ট এর বিভিন্ন রকম গাইডলাইন প্রত্যেক দিন আসছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা মূলত এখানে চারখানা সিস্টেমে বিভক্ত, একদম হাইয়েস্ট লেভেল যেখানে ভেন্টিলেশন এবং ইনটেনসিভ কেয়ার দরকার, তার আগে একদম গ্রাউন্ড লেভেলে রয়েছে স্ক্রিন ইং, তার আগে স্টেপ টু তে রয়েছে SARI, তারা আরো খারাপ হলে step-by-step, তারপরে step-4। একটাই অনুরোধ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার দুদিকেই লকডাউন চলছে। এই লক ডাউন কি করে? করে হচ্ছে মানুষের মানুষের যে সোশ্যাল মিক্সিং সেই সোশ্যাল মিক্সিং টা কে কমিয়ে দেয়। দেখা যায় একজন করোনাভাইরাস পজিটিভ পেশেন্ট চারশো কুড়ি থেকে 426 জনকে পজেটিভ করতে পারে এবং সবচেয়ে যা চিন্তা আর তা হচ্ছে যে ফেজ টার মধ্যে তিনি পজেটিভ কি নেগেটিভ তার কোনো শারীরিক সিমটম আসেনা। এই ফেজটা প্রায় 6 থেকে 9 দিনের মানে তিনি রিসেন্ট ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন সিমটম প্রডিউস করবেনা, তিনি বাইরে কোনো রকম অসুবিধা দেখতে পাবেন না। এই 6 থেকে 9 দিনে তিনি অজস্র লোকের সাথে মিশবেন অজস্র মানুষকে ইনফ্যাক্ট করবেন এবং এবার যখন আট বা ন নম্বর দিনে নিজেও অসুস্থ হলেন কোন চিকিৎসকের কাছে গেলেন এবং উনার টেস্ট হলো তার মধ্যে 10 থেকে 12 খানা দিন পেরিয়ে গেল। এইজন্য কোয়ারেন্টাইন টা বলা হয় 14 দিনের অ্যাপ্রক্সমেটলি। দেখা যায় যে 14 হচ্ছে একটা মিডিয়াম রেঞ্জ অর্থাৎ পুরো গ্রাফটা ব্রড করলে দেখা যায় 14 নম্বর দিনে সর্ববৃহৎ সংখ্যা রোগীকে আমরা পজেটিভ আকারে পাব। এই 14 টা দিন আলাদা করে রাখা হয়। তার মানে যদি সোশ্যাল ডিসটেন্স না থাকতো এই প্রথম রোগী যারা এই ফেজে থাকবে তারা কিন্তু রোগ ছড়াতে থাকবে অন্যরা কিছু বুঝে উঠবার আগেই। অর্থাৎ ভয়াবহ এর আকার ভয়াবহ এর বিন্যাস। একটাই অনুরোধ সবার কাছে অতিমারি আমরা কেউ কোনদিন দেখিনি।সেই জন্য এই মুহূর্তে সরকার যা বলছে সবটা মানা আমাদের সবার পক্ষে উচিত। সবার পক্ষে ভালো। এ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। এই লক ডাউন পিরিয়ড একটি রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার কে লড়বার মত টাইম টুকু দেয় অর্থাৎ যে সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কে সাজাতে পারবে, আসন্ন যে বিপদ আসছে তার সাথে লড়বার ক্ষমতা রাখবে এবং এই অসুখের নেসেসারি ওষুধ এবং ভ্যাকসিন তৈরি করবার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারবে। একটা কথা মনে রাখা ভাল যেকোনো অতিমারী বা মহামারী ততক্ষণ নির্মূল করা সম্ভব নয় না যতক্ষণ তার স্পেসিফিক ভ্যাকসিন ডেভলপ করছে। এই মুহূর্তে কিন্তু করোনাভাইরাস এর কোন ভ্যাকসিন নেই। যে চিকিৎসা গুলো এখন চলছে সেগুলো হচ্ছে রোগীর অসুবিধা অনুযায়ী চিকিৎসা। 4 খানা গ্রেডেশন করা আছে ন্যূনতম প্রেডিকশন যেখানে অ্যাবসোলেটলি কোন চিকিৎসায় লাগে না, শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ আর তার স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পর্যালোচনা করা। এর থেকে বেশি কিছু লাগেনা। এরপরে একটা লেভেল অফ ট্রিটমেন্ট থাকে এজিথ্রোমাইসিন তারপর অ্যান্টিভাইরাস ড্রাগ দেওয়া হয় এবং লাস্ট লেভেল অফ ট্রিটমেন্ট যেখানে আইসিসিইউতে ভেন্টিলেশন ইত্যাদিতে চলে যায়। আমাদের একটাই অনুরোধ সবার কাছে যে গাইডলাইনস এবং প্রটোকল দেওয়া হয়েছে সেগুলো মানুন পৃথিবীর এই অবস্থা আমরা কেউ কোনদিন দেখিনি। আমরা আশা করব এই ঘোর অন্ধকার কেটে যাবে, নতুন সূর্যের উদয় হবে। বাংলা নববর্ষ হয়েছে গতকাল। বঙ্গবাসী পুরো নিঝুম অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে, আনন্দ নেই কাজ নেই, বাইরে বেরোনোর ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হবে না তা বলছি না, যে ক্ষয়ক্ষতি টা অতি সামান্য এর মধ্যে দিয়ে যাবে। সরকারি পরিকাঠামোর উপর বিশ্বাস রাখুন, ভরসা রাখুন। চিকিৎসা কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশে থাকুন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আমরা থালা বাজালাম, কাসর বাজালাম, প্রদীপ জ্বালালাম স্বাস্থ্যকর্মীর উদ্দেশ্যে। এদিকে যখন সে বাড়ি ফিরল তাকে আমরা মারলাম তাকে বাড়ি ঢুকতে দিলাম না। স্বাস্থ্য কর্মী না থাকলে, ডাক্তার না থাকলে, নার্স না থাকলে বেসিক লেভেলের হেল্প কর্তা না থাকলে আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি মানুষ কিন্তু বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। সমস্ত সংশয় উপেক্ষা করে, সমস্ত পিছুটান উপেক্ষা করে, সমস্ত ভয় ভীতি দূর করে একমাত্র এরাই বেরিয়ে এসে মানুষের সেবা করছে। বাকি আপামর জনসাধারণ কিন্তু লোক ডাউনে বাড়ির মধ্যেই আছে। আর একটা অনুরোধ আমাদের সমাজে পুলিশকর্মীরা যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ থাকে, কিন্তু বর্তমানে তাদের যে ধরনের অ্যাক্টিভিটি, বয়স্ক বাবা মার ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, খাবার পৌঁছে দেওয়া, আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করা এমনকি পথ কুকুরদের খাওয়ানো, অসাধারণ।তাদের কাছে আমাদের শত কুর্নিশ, এই বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করলাম ।