পৌষ পার্বণে পিঠেপুলি ও ল্যাবা টানা আজ ইতিহাসের পাতায়

দেখি নতুন লাগে”। তাঁর সেদিনের এই গান বর্তমান বাস্তব জীবনের এক অন‍্যতম অধ‍্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রয়েছে পৃথিবী, রয়েছে মানুষের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু পাল্টে গেছে বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মানুষের জীবন সংস্কৃতি।

এমন একটা সময় ছিল যখন ক‍্যালেন্ডারে পৌষ মাস পড়লেই গ্রামবাংলার মা-ঠাকুমারা এই পৌষ পার্বণকে উপলক্ষ‍্য করে মেতে উঠতেন প্রস্তুতিতে। গোলা ভরা চাল দিয়ে পৌষসংক্রান্তির দিন বাড়ি বাড়ি তৈরি হত পিঠেপুলি। নারকেল ও চাল গোঁড়োর সংমিশ্রণে তৈরি হত নানাধরনের পিঠে। ভাপা পিঠে, সুরুচাকলি, গোরান পিঠে প্রভৃতি পিঠে একসময় ছিল পৌষ পার্বণের এক অন‍্যতম অঙ্গ। কিন্তু বর্তমান ব‍্যস্ত মানুষের কাছে এসব ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তারা এখন এইসব সংস্কৃতি ভুলে মেতেছে মোমো, পিৎজা, বিরিয়ানীতে। তবে বর্তমানে কিছু কিছু জায়গায় এই পিঠেপুলির চল থাকলেও তার মধ্যে মিশেছে ব‍্যাবসার ছোঁয়া। বাড়িতে তৈরি না করেই পিঠে মিষ্টি দোকানে তৈরি হয়ে ফুড ডেলিভারি সংস্থার মাধ্যমে একেবারে পৌঁছে যাচ্ছে বাড়ির সদর দরজায়। তবে এসবের মধ্যে কি আজ সত্যিই সেদিনের সংস্কৃতির কোনো মিল রয়েছে? সেই প্রশ্ন লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞদের মনে। পৌষসংক্রান্তি এলেই গ্রামে গ্রামে বসতো খেজুর গুড় তৈরির শাল। শিউলিরা খেজুর গাছ থেকে রশ সংগ্রহ করে সেই রশ জ্বালানি দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি হত নতুন সুগন্ধে ভরপুর গুড়। আর সেই গুড় দিয়েই পৌষসংক্রান্তিতে খাওয়া হত পিঠেপুলি। বর্তমানে যেমন একদিকে হারিয়েছে পিঠেপুলির সংস্কৃতি, তেমনই অপরদিকে অন‍্য পেষায় ঝুঁকছেন গ্রামবাংলার শিউলিরা। পিঠেপুলির পাশাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে পৌষসংক্রান্তির দিন সন্ধ্যায় বাড়ির উঠোন জুড়ে ল‍্যাবা টানার চলও। গ্রামবাংলার মা- ঠাকুমারা সকাল থেকে কাঁকড়া মাটি সংগ্রহ করে সেই মাটি দিয়ে পৌষসংক্রান্তির দিন সন্ধ্যায় বাড়ির তুলশিতলায় সন্ধ্যা দেওয়ার সময় তার প্রলেপে ভরিয়ে তুলতো বাড়ির উঠোন। এরওপর চালগুঁড়ো, ধান, সরষে ফুল, সিঁদুর, প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করা হত নানিনধরনের নকশা। আর এসব চল আজ কোথাও যেন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। তবে নগর সভ‍্যতায় কোথাও কোথাও রয়েছে টিকে রয়েছে পিঠে তৈরির চল।  বাজার থেকে চালগুঁড়ো কিনে এনে তা গ‍্যাসের উনুনে ননস্টিক কড়াইয়ে আধূনিক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে পিঠে। আর নলেন গুড়ের বদলে মানুষ স্বাদ নিচ্ছে বাজারে খেজুর রসের ফ্লেভার মেশানো সুগন্ধি তরল। মহিষাদলের এক গৃহবধূ অন্তরা জানা বলেন, “একসময় মা-ঠাকুমাদের সঙ্গে এই পৌষসংক্রান্তিতে পিঠেপুলি বানানো হত। কিন্তু এসব এখন তেমন একটা হয়ে ওঠে না।” আর এইসব মিলিয়ে সত্যিই আজ কিশোর কুমারের সেই পৃথিবী আর এই পৃথিবীর মধ্যে বিস্তর বদল ঘটেছে।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন