আমার সকাল : জ্বলছে অ্যামাজনের ঘন জঙ্গল

নিজস্ব প্রতিনিধি : জ্বলছে অ্যামাজনের ঘন জঙ্গল! স্থিত নেই অগ্নিকাণ্ডের। শুধু আগস্টে ৭২ হাজার ৮৪৩ বার আগুন ধরেছে অ্যামাজন রেনফরেস্টে। আর সাত দিনের হিসেব নিলে, অগ্নিকাণ্ড ৯,৫০০ বারেরও বেশি।

অগ্নিকাণ্ডের এই হিসেব দিচ্ছে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, আইএনপিই। তারা জানাচ্ছে, অ্যামাজনের জঙ্গল ধরে ইতিমধ্যেই ব্রাজিলের রোন্ডানিয়া, অ্যামাজোনাস, পারা, মাতো গ্রোসোর আংশিক অংশ আগুন গ্রাস করেছে। অ্যামাজনের রেনফরেস্টে অগ্নিকাণ্ড স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু, এ ভাবে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে আগুন ছড়ায়নি। আইএনপিই’র সমীক্ষা বলছে, গত বছর এই সময় পর্যন্ত তুলনা করলে, অ্যামাজনে অগ্নিকাণ্ড ৮৩% বেড়েছে। তার একটা কারণ অবশ্য বলছেন, অপর্যাপ্ত বৃষ্টি।

একের পর এক আগুন লাগছে আমাজন অরণ্যে। লেলিহান শিখা আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে মহাকাশ থেকেও। আগুনের প্রকোপ এতটাই যে নিস্তার পায়নি ২৭০০ কিলোমিটার দূরের শহর সাও পাওলো। ব্রাজিলের রোরাইমা প্রদেশ থেকে পেরুর আকাশেও হানা দিয়েছে ধোঁয়া।

এ বছর আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যে ৭২,৮৪৩টি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় যা ৮৩% বেশি! এবং ২০১৩-র তুলনায় দ্বিগুণ! দাবানলের এই প্রকোপ আগের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘ইনপে’-র। আমাজনে নতুন ৯,৫০৭টি দাবানলের চিহ্ন গত বৃহস্পতিবারই উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা-ও আমাজন অঞ্চলের দাবানলের বেশ কয়েকটি উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিহত করতে অন্যতম ভরসা আমাজন অরণ্য। গোটা বিশ্বের ফুসফুস বলে পরিচিত এই অরণ্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে। সেখানে এ রকম লাগাতার দাবানলের ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে পরিবেশবিদদের। শুকনো বাতাসে দাবানল জ্বলে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সব দাবানলকেই ‘প্রাকৃতিক’ বলে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, অনেক সময়েই চাষের জন্য জমি বা খামার তৈরি করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। ব্রাজিল তথা আমাজন অঞ্চলও তার ব্যতিক্রম নয়। তা ছাড়া, বিভিন্ন খনিজ পদার্থের জন্য আমাজন অরণ্যে লাগাতার জঙ্গল সাফ করে খনন কাজ চালানো হয়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মিনিটে একটি ফুটবল মাঠের মাপের জঙ্গল কাটা হয় এখানে।অ্যামাজন থেকে পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের 20% আসে । তার মানে আমাদের বেঁচে থাকার রঙ মিশে আছে অ্যামাজনের সবুজ রঙে । রেনফরেস্ট সাধারণত স‍্যাঁতস‍্যাঁতে , তাই তাতে দাবানলের প্রায় কোনো সম্ভাবনাই নেই ।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর নীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন পরিবেশবিদেরা। জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার আগে আন্তর্জাতিক হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না-করেই আমাজন অঞ্চলকে চাষ ও খনিজ উত্তোলনের কাজে ব্যবহারের কথা বলেছিলেন তিনি। এখন যদিও বোলসোনারোর বক্তব্য, ‘‘অযথা এ সব দোষারোপ করা হচ্ছে। এই সময়ে আগুন জ্বালিয়ে চাষের জমি তৈরি করেন চাষিরা। সেটাই রেওয়াজ।’’ ইনপে-র পরিসংখ্যানকে ‘ভুয়ো’ বলে উড়িয়ে দিয়ে ইনপে-র ডিরেক্টরকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন