লক্ষ্মণ শেঠ জামানত বাঁচাতে পারবেন ?

                                                কণাদ দাশগুপ্ত

ভিক্ষার চাল কাড়া আর আকাড়া।

When you can’t have exactly what you want, you should be satisfied with whatever you are given. প্রদেশ কংগ্রেস এখন গভীর নিষ্ঠায় এই পথকেই বেছে নিয়েছে। Choosers হওয়ার সক্ষমতার অভাব। তাই দ্বিতীয় পথই একমাত্র অবলম্বন। 

 

লক্ষ্মণ শেঠের হাতে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা তুলে দেওয়ার মুহূর্তে তাই কেউ ভাবেনি, ওই হাত একসময় লাল ঝাণ্ডা বহন করেছে, তারপর ভারত নির্মাণ পার্টির ঝাণ্ডা নিয়েছে, তারপর বিজেপির পতাকা নিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েছে। তারপর তৃণমূল-পতাকা ধরতে চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে, নগ্নভাবে প্রকাশ্যে স্তাবকতা করেছে। কিন্তু ‘নন্দীগ্রাম গণহত্যার নায়ক’-কে দলে নিলে ভুল বার্তা যাবে, এই বলে লক্ষ্মণের মুখের ওপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় তৃণমূল। গভীর অস্তিত্বের সংকট দেখা দিলো লক্ষ্মণ শেঠের। সিপিএম দল থেকে তাড়িয়েছে, তাই বামফ্রন্টের কোনও শরিক এই বোঝা নেবেনা। তখন কিছুদিন কিরনময় নন্দের সঙ্গে ঘুরঘুর করে সমাজবাদী পার্টিতে নোঙ্গর সেট করার চেষ্টা হয়। কেটে যান কিরনময় নন্দও। ফের অথৈ জলে। হাতে তখন এসইউসিআই, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, সুবাস ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ, মায়াবতীর বসপা বা তেজস্বী যাদবের আরজেডি জাতীয় কিছু দল এবং শতাব্দীপ্রাচীন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেস দেখলো এততো বড় হস্তি-কে হাতছাড়া করা যাবেনা। ওই যে ভিক্ষার চাল কাড়া আর আকাড়া। পাকা হয়ে গেলো সিদ্ধান্ত। বলা হলো, পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারি-পরিবারের মোকাবিলা করতে পারবেন একমাত্র এই লক্ষ্মণ শেঠ। লক্ষ্মণ শেঠের দীর্ঘদিন ধরে কষ্টার্জিত সুনাম, ক্যারিশমা, গ্ল্যামার, রাজনৈতিক মেধা এবং

সাংগঠনিক প্রতিভার জোরে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবে পূর্ব মেদিনীপুরে, হয়তো এক সময়ে ‘স্বাধীন তাম্রলিপ্ত সরকার’ জাতীয় কিছু একটা গঠনের সম্ভাবনাও থাকবে। এমন একটি মহীরুহকে দলে বরণ করে নিতে গৌরব গগৈ প্রস্তাব পেশ করলেন হাই কম্যাণ্ডে। ‘ছোটখাটো’ কিছু সমস্যা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সফল হলো এই সম্পদকে দলে গ্রহণ করে তাঁকে  তমলুক আসনে প্রার্থী করতে। রাজ্যে এখনও টিঁকে থাকা কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা আশ্বস্ত হলেন, প্রাজ্ঞ-অভিজ্ঞ নেতারা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন এবার পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারি-সাম্রাজ্য হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কারন, ভাবা হচ্ছে, অধিকারি-সাম্রাজ্য তছনছ করার পরিকাঠামো ওই জেলায় সিপিএম বা বিজেপির থেকেও বেশি আছে লক্ষ্মণ শেঠের !

তো, একবার দেখা যাক তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে এই মেগাস্টার লক্ষ্মণ শেঠের প্রভাব কতখানি সিপিএম এই লক্ষ্মণ শেঠকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর উনি 2016 সালে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নাম দেন ‘ভারত নির্মাণ পার্টি’। লক্ষ্মণবাবু

নিশ্চিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরে ওনার যা প্রভাব এবং সুনাম, তাতে সব দলকে ঘোল খাইয়ে বেশ কয়েকটি আসন জিতে নেবেন। জেলার বেশকিছু আসনে ওই ‘ভারত নির্মাণ পার্টি’ প্রার্থী দেয়। অন্য সব বাদ দিয়ে দেখা যাক তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে কেমন ফল করলো  ‘ভারত নির্মাণ পার্টি’-র প্রার্থীরা। এটা একারনেই জানা দরকার কারন, এই তমলুক আসন তৃণমূলের কাছ থেকে কেড়ে নিতেই কংগ্রেস এ রাজ্যের ‘যোগ্যতম’ মানুষ লক্ষ্মণ শেঠকেই প্রার্থী করেছে দলে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।

এই তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত 7টি বিধানসভা কেন্দ্র- হলদিয়া, নন্দকুমার, তমলুক,পাঁশকুড়া-পূর্ব, ময়না, মহিষাদল এবং নন্দীগ্রাম।এই 7 বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে 6 টিতে প্রার্থী দেয় লক্ষ্মণ শেঠের ভারত নির্মাণ পার্টি। শুধুমাত্র নন্দকুমার কেন্দ্রে লক্ষ্মণ শেঠের প্রার্থী ছিলোনা। শেঠবাবুর সাংগঠনিক দক্ষতা, প্রভাব এবং সুনামের ভিত্তিতে ভারত নির্মাণ পার্টির 6 প্রার্থী কত ভোট পেয়েছিলেন এবং প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ কত,  একটু দেখে নিই।

 

■ হলদিয়া – 

অভিমন্যু মণ্ডল – 2996 –  1.4%

 

■ তমলুক-

রঞ্জণ মালাকার –  758 –  0.36%

 

■ পাঁশকুড়া-পূর্ব-

অমিয় সাহু – 2181 – 1.1%

 

■ ময়না-

নিমাই গুড়িয়া – 1907 – 0.95%

 

■ মহিষাদল-

তপন ব্যানার্জি – 2832 – 1.4%

 

■ নন্দীগ্রাম-

রামমোহন মাইতি – 717 – 0.36%

 

কষ্ট করে একটু যোগ করলে দেখা যাচ্ছে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা 6 বিধানসভা কেন্দ্রে এই ‘শার্দূল-সন্তান’ লক্ষ্মণ শেঠ নিজের সীমাহীন সুনাম এবং প্রভাব কাজে লাগিয়ে মোট 11, 391 ভোট যোগাড় করতে পেরেছিলেন। 

তথ্য হিসাবে এটাও জানতে হবে,

এই কেন্দ্রে 2016-র লোকসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের দিব্যেন্দু অধিকারি পেয়েছিলেন 7,79,594 ভোট।

এবার প্রদেশ কংগ্রেসের ‘ফেসবুক- সিংহ’-রা বোঝাবেন এবার তো লক্ষ্মণ শেঠ কংগ্রেস প্রার্থী। কংগ্রেসের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক আছে না ! সেটা তো যোগ হবে লক্ষ্মণ শেঠের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কের সঙ্গে। তাহলেই তো লড়াই তুমুল হবে।তাহলে এবার দেখে নিই সেই 1996 থেকে 2016 পর্যন্ত তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীরা কত ভোট পেয়েছিলেন এবং প্রাপ্ত ভোটের শতাংশই বা কত ছিলো।

 

● 1996

জয়ন্ত ভট্টাচার্য – 4,50,473 – 48%

 

● 1998

জয়ন্ত ভট্টাচার্য –   56,538 –   6 %

 

● 1999

মানিক ভৌমিক –  44,622 –  4.9 %

 

● 2004

সুদর্শন পাঁজা –  34,794 –   3 %

 

● 2009

প্রার্থী ছিল না 

 

● 2014

আনোয়ার আলি – 29,645 –   2 %

 

● 2016

পার্থ বটব্যাল – 19,851 –   1.5 %

 

1996 থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ভোট কমেছে কংগ্রেসের। শেষবার কংগ্রেস পেয়েছিলো প্রায় 20 হাজার ভোট। এর সঙ্গে যদি শেঠের ভোট যোগ হয়, (যদিও তা অসম্ভব, কারন অনেকেই ফিরে গিয়েছেন সিপিএমে। লক্ষ্মণ শেঠের ঘনিষ্ঠরাও এখন সিপিএম করছেন), তাহলে দাঁড়াবে 30 হাজার ভোট।

এই ভোট পেতে তিন দল ফেরত তেণ্ডুলকরকে কেন নিতে হলো, তা প্রদেশ কংগ্রেসই বলতে পারবে। তমলুকে এই লক্ষ্মণ শেঠ যা ভোট পাবেন, সেই ভোটটাই পেতেন ওই কেন্দ্রের যে কোনও ব্লক স্তরের কংগ্রেস কর্মী। ভোট পাটিগণিতে হয়না এটা একশো ভাগ সত্যি। আবার এটাও সত্যি ভোট কোনও পিসি সরকারকে দিয়েও হয়না।

 

তবে এটা একদিক থেকে ভালো, তমলুকের সাধারন কোনও কংগ্রেস কর্মীর রক্ত জল করা জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার থেকে লক্ষ্মণ শেঠের সিন্দুকে থাকা লাল-টাকায় জমা করা জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া অনেক ভালো।

 

আর একটা কথা, আশা করবো,  এআইসিসি সভাপতি, রাজ্যে এআইসিসি’র পর্যবেক্ষক নিশ্চয় ভোট প্রচারে আসবেন তমলুকে। 

 

প্রদেশ কংগ্রেস দীর্ঘজীবী হোক।

  
  

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন