আপনার কিছু বলার আছে তাই জন্যই আপনি পত্রিকা করেন

আইজেএ-র বার্ষিক সভা অন্যদিশার সন্ধান দিল

নিজস্ব প্রতিনিধি: ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএ)-র ৯৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা রবিবার অনুষ্ঠিত হল কলকাতা প্রেস ক্লাবে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৪০০ সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছিলেন এই সভায়।সংগঠনের বার্ষিক রিপোর্ট এদিন পেশ করা হয়।সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখর সেনগুপ্ত এই রিপোর্ট পেশ করেন। সভাপতি এস সাবানায়কন এদিনের সভা পরিচালনা করেন। সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা সাংবাদিকরাও এদিনের বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিয়ে রিপোর্টের ওপর আলোচনা করেন।আইজেএ-র অন্যতম প্রাণপুরুষ মিহির গঙ্গোপাধ্যায় এদিনের সভায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী দিনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাজের সুবিধার জন্য সরকারি যেসব প্রকল্পগুলি রয়েছে সেগুলি যাতে সাংবাদিকরা পেতে পারেন, তার জন্য সংগঠনকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। মৃণাল বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে সাংবাদিকতা এখন কি ধরনের সংকটের মুখোমুখী এবং সেই সংকট কিভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব সেবিষয়ে আলোকপাত করেন। সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত সাফ জানান, এখন খবর চেপে যাওয়া হচ্ছে, তা গুজরাটেই হোক কিংবা পশ্চিমবঙ্গে। নোটবন্দির সময় গুজরাতের একটি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে সবচেয়ে নোট বদল হয়েছে, যে ব্যাঙ্কের সভাপতি বিজেপি’র শীর্ষ নেতার খুব ঘনিষ্ঠ। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি বিমানবন্দরে কিছু একটা ঘটেছে। সেটা যাই হোক, তাও প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম চেপে গিয়েছে। কারণ, আপনার পত্রিকা যদি সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর মুখাপেক্ষী থাকে তাহলে আপনাকে সেই সরকারের হয়ে কাজ করতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপন পেলে আপনি লাভবান হবেন ঠিকই, কিন্তু আপনাকেও সরকারের পাশে থাকতে হবে। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা আপনি করতে পারবেন না। বর্তমানে ছোট ছোট পত্রিকাগুলির সমস্যা অনেক রয়েছে। বদল হয়েছে সাংবাদিকতা। প্রয়োজনে ওয়েব পোর্টালে খবর করার দিকে মন দিন। ছোট পত্রিকা চালিয়ে কোটি কোটি টাকা লাভ করেছেন, এমন ঘটনা বিরল। আপনাদের কিছু বলার আছে, তাই আপনি পত্রিকা করছেন। বড় পত্রিকাতে এই বলার জায়গাটা ক্রমশ কমে আসছে। বড় পত্রিকাতেও নামি সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে, ছোট পত্রিকা চালানো অনেক চ্যালেঞ্জের হলেও এতটা নিরাপত্তাহীনতা সেখানে নেই। ঠিক এভাবেই সুদীপ্ত সেনগুপ্ত খোলামেলা তাঁর মত বিনিময় করেছেন এদিনের সভায়। কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস শূর তাঁর বক্তব্যে ছোট পত্রিকা চালানো যে কতটা কঠিন তা তুলে ধরে বলেন, পত্রিকাকে ঝকঝকে করতে হবে। ভালো করতে হবে। বড় পত্রিকাগুলি যতই জেলার জন্য আলাদা পাতা দিক না কেন, স্থানীয় খবর ছোট পত্রিকাগুলি যেভাবে দেয়, সেভাবে বড় পত্রিকা দিয়ে উঠতে পারে না। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার কথা উল্লেখ করে স্নেহাশিসবাবু বলেন, স্থানীয় ব্লকভিত্তিক, অঞ্চলভিত্তিক খবর দিয়ে একটি পত্রিকা কিভাবে বৃহৎ পুঁজির সংবাদমাধ্যমের চেয়ে জনপ্রিয়তায় এখনও অনেক এগিয়ে, তা নিশ্চয় আপনাদের অজানা নয়। বর্ষীয়ান সাংবাদিক কমল ভট্টাচার্য সাফ জানান, অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে আইজেএ ৯৮ বছরে পা দিয়েছে। ২০২২-এ আইজেএ-র শতবর্ষ রয়েছে। আইজেএ-র একটি গৌরবোজ্জ্বল অতীত যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনভাবে তার ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। সম্প্রতি আইজেএ-র নাম করে একটি সংগঠন নিজেদের কর্মকাণ্ড বিস্তার করার চেষ্টা করছে। এই ধরনের সংগঠন কখনও টিকে থাকতে পারে না। আইজেএ-র নাম সবাই জানে। এই সংগঠনের সভায় এসে নিজেকে প্রাণবন্ত লাগে। বর্ধমান, হুগলি, দুর্গাপুর, হাওড়া থেকে আসা সাংবাদিকরাও এদিনের সভায় নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। ২০১৯-২০-র জন্য এদিন নতুন কমিটি গঠন হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন শেখর সেনগুপ্ত ও এস সাবানায়কন। সহ-সভাপতি সুদীপ্ত সেনগুপ্ত, তারকনাথ রায়। কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদক দেবাশিস দাস, সহকারী সম্পাদক কে ডি পার্থ, আব্দুল ওদুদ। এছাড়াও তৈরি হয়েছে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন