করোনা নিয়ে বেকায়দায় বেজিং, দেশ ছাড়ার পর বিস্ফোরক বয়ান চিনা ভাইরোলজিস্টের
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এবার বেশ বেকায়দায় পড়ল বেজিং। করোনার জন্ম বৃত্তান্ত থেকে ঠিকুজি-কুলুজি নিয়ে বিজ্ঞানী-গবেষক থেকে সাধারণ মানুষের জল্পনার শেষ নেই। গবেষণাগার নাকি প্রকৃতিতেই এই ভাইরাসের সৃষ্টি তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর মতপার্থক্য। এমনই পরিস্থিতিতে সামনে এল বেজিংয়ের বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযোগ।
আমেরিকার এই ভাইরাস আক্রমণের পর নাজেহাল হওয়ার পর থেকেই চিনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি তাঁর অভিযোগ উহানের গবেষণাগারেই এই ভাইরাসের জন্ম। এমনই এক সঙ্কটকালে সরাসরি বেজিংয়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন হংকংয়ের এক ভাইরোলজিস্ট লি-মেং ইয়ান। প্রাণনাশের ভয়ে হংকংয়ের স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর এই ভাইরোলজি ও ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইয়ানের অভিযোগ, ‘এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিষয়ে অনেক আগেই জেনেছিল বেজিং। কিন্তু, তারা চেপে গেছে।’ এমনকি তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র উপদেষ্টা প্রফেসর মালিক পেইরিসকেও অভিযুক্ত করেন তথ্য গোপণের অভিযোগে। তাঁর বক্তব্য, পেইরিসও সবকিছু জানতেন। কিন্তু, তিনিও কোনও অজানা কারণে সব জেনেও নিশ্চুপ থাকেন। প্রসঙ্গত, এই মালিক পেইরিস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ল্যাবরেটরির কো-ডিরেক্টর।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এই ভাইরোলজিস্ট জানিয়েছেন, উহান থেকে সংক্রমণের খবর আসার আগেই এই ভাইরাস নিয়ে তিনি গবেষণা শুরু করেছিলেন। হংকংয়ের একটি বায়োসেফটি ল্যাবে তিনি এই নতুন ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে বুঝতে পারেন এর ভাইরাল স্ট্রেন অনেক বেশি প্রাণঘাতী। তখন তিনি এই ভাইরাসের মোকাবিলার উপায় খুঁজতে শুরু করেন। একথা জানান তাঁর সুপারভাইজারকে। কিন্তু সেই সুপারভাইজার তাঁকে এই গবেষণা থেকে নিরস্ত করতে চেষ্টা করেন। এরপর রহস্যজনকভাবে গবেষণার মাঝপথেই প্রাণনাশের হুমকি পান তিনি। এমনকী তাঁর কম্পিউটার ও ব্যক্তিগত তথ্যেও নজরদারি শুরু হয়।
ইয়ান জানিয়েছেন, ‘আমার কম্পিউটার হ্যাক করার পর সরকারি গুন্ডারা লাগাতার হুমকি দিতে থাকে। দেশ না ছাড়লে আমাকে মেরে ফেলত।’
এই রকম পরিস্থিতিতে ২৮ এপ্রিল হংকং থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। সঙ্গে নিজের গবেষণার বিষয়বস্তু, ল্যাবের গোপন ক্যামেরা ও সেন্সরও নিয়ে যান তিনি।
এই ভাইরোলজিস্ট আরও জানিয়েছেন, চিনের যেসব ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন, রহস্যজনকভাবে তাঁদের অনেকেই নিখোঁজ হয়ে যান। অনেকের আবার মৃত্যুও হয়। তাই ভয়ে মুখে কুলুপ আঁটেন গবেষকরা। সকলকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু, মানুষের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি চেপে যান সবাই। এমনকি বেজিং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানালেও এর ভাইরাল স্ট্রেন সার্স-কভ-২’এর কথা চেপে যায়। যা আরও ভয়ানক। কারণ চিন ততদিনে জেনে গিয়েছিল নতুন এক ধরনের সংক্রামক ভাইরাসের মহামারী শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এই তথ্য তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে গোপন করে। এমনকি আরও অভিযোগ, চিনের বিজ্ঞানীদেরও এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে দেওয়া হয়নি।
লি এদিন মনে করিয়ে দেন, উহানের সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তার ওয়েনলিয়াঙের কথা। এই ডাক্তার ওয়েনলিয়াঙই প্রথম করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানানোর পর, রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে সরকার জানায়, করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ওই ডাক্তারের। এমনকি এই বিষয়ে খবর করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েন বহু চিনা সাংবাদিকও। লি আরও জানান, চিনে করোনায় আক্রান্তদের দেহ পোড়ানোর ভিডিয়ো প্রকাশ করে নিখোঁজ হন চেন কিউসি নামে এক সাংবাদিক। এমনকি বহু বিদেশি সাংবাদিককেও চিনা সরকারের হুমকির মুখে পড়তে হয়।