ভালোবাসা কারে কয়? ভালোবাসা কি শুধু মানুষই বোঝে? তা হয়ত নয়। মনুষ্যেতরও যে ভালোবাসতে জানে তার প্রমাণ রেখে গেল জয়া। তাই ভালোবাসার মানুষকে শেষ বিদায় জানানো নয়, তাঁর সঙ্গেই শেষ বিদায় নিল সেও।
ডাক্তার অনিতা রাজ। বছর তেরো আগে কানপুরের এক হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একদিন হাসপাতাল থেকে বাড়ির দিকে ফিরতি পথে হাসপাতালের পাশেই পড়ে থাকতে দেখেন একরত্তি এরটা কুকুরছানাকে। সারা গায়ে পোকা আর ক্ষত নিয়ে কুঁইকুঁই করে কাঁদছিল। আশপাশের লোকেরা দেখলেও একটা রাস্তার কুকুরছানাকে দেওয়ার মতো সময় হয়তো কারোরই ছিলনা। কিন্তু চলে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালেন ডাক্তার রাজ। তুলে নিলেন ছোট্ট ছানাটিকে। নিয়ে এলেন নিজের বাড়িতে। দিন কয়েকের চিকিৎসায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠড় ছানাটি। ততদিনে ডাক্তার অনিতা রাজ ও তাঁর পরিবারের সবাই মায়ায় পড়ে যান কুকুরটির। সেই থেকে ওই কুকুরছানাও ডাক্তার রাজের বাড়িরই এক সদস্য হয়ে যায়।
ডাক্তার অনিতা রাজ ভালবেসে ওর নাম রাখেন জয়া। দিনের শেষে ডাক্তার রাজ বাড়ি ফিরলে জয়া আনন্দে সারা বাড়ি ছোটাছুটি করে মাতিয়ে তুলত। এমনকি পরিবারে আসার পর থেকে তাঁকে ছেড়ে একদিনও থাকেনি জয়া। তাঁদের সেই ১৩ বছরের নিখাদ বিরামহীন ভালবাসায় শেষপর্যন্ত দাঁড়ি টানল মৃত্যু।
গত কয়েক মাস ধরে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন বর্তমানে কানপুরের মালিকপুরামের স্বাস্থ্য বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর ডাক্তার অনিতা রাজ। দিন সাতেক আগে তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। অনিতা রাজের মৃতদেহ বাড়িতে আনার পর থেকেই কষ্টে ছট্ফট্ করতে থাকে জয়া। কিচুক্ষণ পরেই বাড়ির চার তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেয় সে। ঘটনায় স্তম্ভিত এলাকাবাসী। ডাক্তার রাজের বাড়ির লোকও দুই প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ। ডাক্তার অনিতা রাজের মৃতদেহের পাশেই রাখা হয়েছিল জয়াকে। তারপর বাড়িতেই একটি জায়গায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।