এ যেন হিন্দি ক্রাইম থ্রিলার। অন্ধকার সাম্রাজ্যের এক ডন। যার অনেক হাত। রাজনীতিক থেকে পুলিশ, সবাই যার পকেটে থাকে। তেমনই ইমেজ ছিল উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের। বহু অপরাধের মাস্টারমাইন্ড বিকাশকে ধরার বুকের পাটা কারোর ছিল না। রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় বেশ রসেবশেই ছিল সে। সেই তারই কলারে কিনা হাত দেওয়ার চেষ্টা? রাগ তো হবেই। তার সেই রাগের খেসারত সবেমাত্র গত সপ্তাহেই দিয়েছেন আট পুলিশ কর্মী। এঁরা সকলেই বিকরু গ্রামে বিকাশের খোঁজ পেয়ে সেখানে অপারেশন চালাতে গিয়েছিলেন। আগাম খবর পেয়ে গ্রামে ঢোকার মুখে জেসিবি দিয়ে পুলিশের পথ আটকায় তার দলবল। তারপর সেই পুলিশ বাহিনীর ওপর গুলি চালিয়ে এক ডিএসপি সমেত আট পুলিশ কর্মীকে খুন করে সে।
এদিকে ওই ঘটনার পর পুলিশের অভিযোগ পুলিশই বিকাশের ইনফর্মার। পুলিশের অভিযানের খবর আগাম পৌঁছে গিয়েছিল বিকাশের কাছে। তাই সে বেশ ভালো মতো প্রস্তুতি নিয়েই সেদিন পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল। এহেন বিকাশ কিন্তু আট পুলিশকর্মীকে খুন করার পর এখনও অধরা।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, এসটিএফ, আইবি সবাইকেই ঘোল খাইয়ে এখনও বিহাল তবিয়তে বিকাশ দুবে। তার মাথার দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা। আবারও কার্যত পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে পালিয়ে গেল সে। মঙ্গলবার দুপুরে হরিয়ানার ফরিদাবাদে দিল্লির অদূরে একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে তার দু’জন সঙ্গীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু অভিযানের আগেই বেপাত্তা হয়ে যায় ধুরন্ধর বিকাশ। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য। বিকাশ দুবে সম্পর্কের ব্যাপারে রাজ্যের ডিআইজি অনন্ত দেও-কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন ঘটনার দিন নিহত ডিএসপি দেবেন্দ্র মিশ্র। কিন্তু ডিআইজি তাতে গুরুত্ব দেননি। এই অনন্ত দেওয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে বিকাশকে তথ্য পাচারের। এই ঘটনার পরই অনন্ত দেওকে সাসপেন্ড করেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। তাছাড়া মঙ্গলবার চৌবেপুর থানার সমস্ত পুলিশকর্মী সহ মোট ৬৮ জনকে বদলি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে বিকাশকে বাগে না পেলেও কিছু সাফল্য পেয়েছে যোগীর পুলিশ। বুধবার সকালে উত্তরপ্রদেশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে বিকাশের ‘ডানহাত’ বলে পরিচিত অমর দুবে। পুলিশকর্মীদের হত্যার ঘটনায় বিকাশের সঙ্গে নাম রয়েছে অমরেরও।
ঘটনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (ল অ্যান্ড অর্ডার) প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, হামিরপুরের স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স অভিযান চালিয়ে কানপুরে পুলিশ মৃত্যুর ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত, বিকাশের বিশ্বস্ত সঙ্গী অমর দুবেকে খতম করেছে।
একইসঙ্গে বিকাশের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে এসটিএফের ৪০টি দল। এদিকে দিল্লি-মথুরা হাইওয়েতে ফরিদাবাদের একটি হোটেলে বিকাশ গাঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ হানা দিলে সেখান থেকেও পালিয়ে যায় বিকাশ। তবে সেখান থেকেই বিকাশের দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে জানিয়েছে ওই হোটেলেই বিকাশ লুকিয়ে ছিল।
পরে ওই হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিই বিকাশ দুবে। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজেও গ্যাংস্টারের ছবি ধরা পড়েছে। তবে ওই ছবিতে মাস্ক পরে থাকলেও বিকাশকে শনাক্ত করেছেন তদন্তকারীরা। হোটেল থেকে গ্রেফতার হওয়া অঙ্কুর নামে এক ব্যক্তি বিকাশকে গা ঢাকা দিতে সাহায্য করেছিল। অপরজন বিকাশের গ্রামেরই বাসিন্দা। তার নাম প্রভাত।
বিকাশের সঙ্গে পুলিশের আঁতাতের বিষয়টি ইতিমধ্যেই প্রামাণিত। মঙ্গলবারের অভিযানেও সে অল্পের জন্য পালিয়ে যাওয়ার পর আবার একই প্রশ্ন ঘুরেফিরে উঠছে। অর্থাৎ ২ জুন রাতে যে ভাবে গ্যাংস্টারকে খবর দেওয়া হয়েছিল, ফরিদাবাদের হোটেলে হানার খবরও তাকে আগাম কেউ জানিয়েছেন কিনা। সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশের কানপুরে পুলিশের ওপরে হামলা চালিয়ে গাঢাকা দিয়েছে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে। ঘটনার বেশকিছু দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও অধরা বিকাশ দুবে। যদিও বড় সাফল্য পেল কানপুর পুলিশ। বিকাশের নাগাল না পেলেও, তাঁর এক সাগরেদ পুলিশি এনকাউন্টারে মারা পরেছে। পাঁচ দিনের মাথায় বিকাশ দুবেকে না পাওয়া গেলেও খোঁজ পাওয়া যায় অমর দুবের। সে ফরিদাবাদের ফরিদাবাদের বাধকাল এলাকায় একটি হোটেলে সে ঘাঁটি গেড়েছিল বলে গোপন সূত্রে খবর পায় পুলিশ। এই খবর পেয়েই মঙ্গলবার রাতে সেই হোটেলে হানা দেয় স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের দল। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রায় ৩০-৩৫ জন অফিসার সাধারণ পোশাকে এই রেইড চালায়। তবে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই সেই তল্লাট থেকে গা ঢাকা দেয় কুখ্যাত অপরাধী বিকাশ। পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায় অমর। তাকে এনকাউন্টারে খতম করে পুলিশ। এর আগে চলতি মাসের ৬ তারিখে কল্যাণপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে আহত হয় বিকাশের আরএক শাগরেদ দয়াশঙ্কর অগ্নিহোত্রী ওরফে কাল্লু। তার পায়ে গুলি লেগেছে। আহত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অগ্নিহোত্রীর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি দেশি পিস্তল এবং দু’টি কার্তুজ। অগ্নিহোত্রীকে লালা লাজপত রাই হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বিকাশের খোঁজে চিরুনী তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। যদিও অভিযোগ পুলিশের একাংশ বিকাশের সঙ্গে সহযোগিতা করায় তদন্ত বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। অভিযুক্ত এক সাব ডিভিশনাল অফিসার এবং বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মীকেও হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।