এ যেন ইতিহাসের এক অদ্ভুত সমাপতন। আজ ১ জুলাই বিধান রায়ের জন্মদিনে প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরের অনুষ্ঠানে বিমান বসুর নেতৃত্বে উপস্থিত থাকবেন বাম নেতারা। বিধান চন্দ্র রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বকালেই রাজ্যে বামপন্থীদের উত্থান। সেই সময়ের খাদ্য আন্দোলন, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনার পর বিধানচন্দ্র রায়কে ‘খুনি’ আখ্যা দিয়েই গড়ে উঠেছিল বামেদের জঙ্গি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। আবার বাম জমানাতেই মহাকরণের অলিন্দে বসেছিল বিধান রায়ের মূর্তি। উন্মোচন করেছিলেন একসময়ের বিরোধী দলনেতা ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। আবার এই বিধান চন্দ্র রায়ের প্রয়াণের পর তাঁকেই যোগ্য প্রশাসক বলে নিজের শোকবার্তায় উল্লেখ করেছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ইএমএস নামবুদ্রিপাদ।
তবে সব দিক থেকেই আজকের দিনটা একটু অন্যরকমের। কারণ কোনও পরিস্থিতিতেই বামপন্থীরা কখনও প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে বিধান রায়ের জন্মদিনে যায়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ। মাথা চাড়া দিয়েছে বিজেপি। তাই বামেদের শত্রু এখন শুধুই কংগ্রেস নয়। সময়ের অভিঘাতে সেই শত্রুতার মুখও আজ ঘুরে গিয়েছে। এখন বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষেরই পাখির চোখ বিজেপিকে রোখা। সেই সময়ের দাবিতেই আজ বামেরা বিধান-ভবনে। আবার আগামীকাল, ২ জুলাই ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রয়াত নেতা অশোক ঘোষের জন্মদিনে হেমন্ত বসু ভবনের অনুষ্ঠানে সোমেন মিত্রর নেতৃত্বে দেখা যাবে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দকে। আজকের এই সৌজন্য জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় হলেও আগামী দিনে পায়ের তলার হারানো মাটি ফিরে পেতে দুই দলের নেতারাই যে অতীত ভুলে সামনে তাকাতে চাইছেন, তা বলাই বাহুল্য।
কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, সময়ের বদল হয়েছে। সেকালে জ্যোতি বসু ছিলেন বিরোধী নেতা, আর গণতন্ত্রে বিরোধীদের যে সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত তা বামেদের দেওয়ার মতো মহানুভবতা বিধান রায়ের ছিল। বিধান ভবনের অনুষ্ঠানে বাম নেতৃত্ব আসবেন। কংগ্রেস ও বাম নেতারা যে ঐক্যবদ্ধ, সেই বার্তা সর্বত্র পৌঁছবে।
#doctorsday2020#Internationaldoctor’sday🏥
জাতীয় ডাক্তার দিবসে , আধুনিক বাংলার রূপকার , ভারতরত্ন ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের মূর্তিতে মাল্যদান এবং বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলেন মাননীয় পরিবহন , সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী শুভেন্দু অধিকারী💫 pic.twitter.com/cw5DZIz5rP— aamarsakal.com (@aamarsakal) July 1, 2020
আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও বিধান রায়ের গ্রহণযোগ্যতা সম্ভবত বামেদের মধ্যে বরাবরই ছিল। সে কারণেই হয়ত, জ্যোতি বসুর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। এমনকি একসময় ‘খুনি’ আখ্যা দেওয়া বামেদের তাঁর সম্বন্ধে মনোভাবও আগেই বদলে গিয়েছিল। এ নিয়ে বহু নজিরও রয়েছে। তবে বিধান রায়ের জন্মদিনে প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরের অনুষ্ঠানে কখনও যায়নি বামেরা। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘বিধানসভায় প্রতি বছর বিধান রায়ের জন্মদিনে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরের অনুষ্ঠানে বিমানদা বললে যাব।’ একইভাবে সোমেনও বলেন, ‘আগে অশোক ঘোষের জন্মদিনের আমরা যাইনি। এ বার যাচ্ছি। এতে এতে সবস্তরেই একসঙ্গে চলার বার্তা পৌঁছবে।’ আর ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ইতিহাসের স্রোত কখনও এক থাকে না। বাধা তৈরি হয়, সেই বাধা ভেঙেই ইতিহাস এগিয়ে চলে।’