বেলজিয়ান ম্যালিনয়। এ নামেই বিশ্বজোড়া পরিচিতি তাদের। আর প্রশিক্ষিত সারমেয় হিসেবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে দক্ষতা সর্বজনবিদিত। এদেরই স্বজাতি ‘কায়রো’র দৌলতে একদিন মার্কিন নেভি সিলসের বুলেটের নিশানা হতে হয়েছিল দুনিয়া কাঁপোনো সন্ত্রাসবাদী ওসামা বিন লাদেনকে। এছাড়াও সিরিয়ার ইদিলিবে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদিকে খুঁজতে মার্কিন ডেল্টাদের সঙ্গী ছিল এদেরই আর এক স্বজাতি ‘কোনান’। আর এখনও মাইন থেকে বুবি ট্র্যাপ খোঁজার কাজে ন্যাটো বাহিনীর ভরসা এই প্রজাতির সারমেয়রা। এমনই আরও চারটি এই প্রজাতির সারমেয় এবার যুক্ত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বন দফতরের কাজে।
এদের মধ্যে রবিবার মধ্যরাতে কলকাতায় পৌঁছচ্ছে দুই সারমেয়— ‘অরল্যান্ডো’ আর ‘সায়ানা’। দু’জনেই মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে বিএসএফ পরিচালিত ‘ন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর ডগস’-এ সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণপর্ব শেষ করেছে। তাদের প্রথমে ‘সল্টলেক ডিয়ার পার্ক’ আনা হবে, সেখানে তাদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। তারপর সুন্দরবনের নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত হবে সায়ানা। আর অরল্যান্ডোর ঠিকানা হবে গুরুমারা জাতীয় উদ্যান। আরও দুটি কুকুর ভোপাল থেকে পাঁচ দিন পর আনা হবে। সেগুলিকে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হবে।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা শনিবার জানিয়েছেন, এবারের ব্যাচে বিএসএফের ট্রেনিং সেন্টারে মাস ছয়েক ধরে প্রায় ৪০টি কুকুর প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। সায়ানা তাদের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয়েছে।
বন দফতর সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে প্রথম করিম নামে গ্বালিয়রে প্রশিক্ষিত একটি ম্যালিনয় পশ্চিমবঙ্গ বন দফতরের কাজে যোগ দিয়েছিল। এর আগে রানি নামে একটি জার্মান শেফার্ড ছিল তাঁদের। করিমের কর্মদক্ষতা দেখে পরবর্তীকালে আরও দু’টি ম্যালিনয় আনা হয়। এর মধ্যে করিম-সহ দু’টি বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্প এলাকায় এবং একটি গরুমারায় রয়েছে। সায়ানা এবং অরল্যান্ডো যোগ দিলে ১০ সদস্যের সারমেয় বাহিনীতে ম্যালিনয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে পাঁচ। শুধু চোরাশিকারি ধরা নয়, বন্যপ্রাণীর দেহাংশ ও বন্যপ্রাণ চোরাচালান রুখতেও সায়নাকে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি, কাজে লাগানো হবে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গ্রাম-লাগোয়া বাদাবনে আশ্রয় নেওয়া বাঘ, হরিণ, বুনোশুয়োরদের সন্ধানেও।
প্রসঙ্গত, করিমের দক্ষতা বক্সা জাতীয় উদ্যানে ইতিমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি তার সাহায্য নিয়েছে স্থানীয় পুলিস প্রশাসনও। এলাকার বিভিন্ন এটিএম ডাকাতি ও চুরির ঘটনার তদন্তে অপরাধীদের খুঁজে বার করতে পুলিসকে সাহায্য করেছে করিম। বলা যায়, করিমকে দেখেই আরও এই প্রজাতির কুকুরকে নিরাপত্তার কাজে লাগানোর কথা ভাবছে বনদফতর। রাজ্যের এক বনকর্তা জানিয়েছেন, প্রাণশক্তিতে ভরপুর হলেও ম্যালিনয়দের খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম এবং পরিচর্যার দিকটি সতর্কভাবে নজরে রাখতে হয়।