বেফাঁস মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যে এবার বেজায় চটেছেন মার্কিন সেনা আধিকারিকরা। জর্জ ফ্লয়েড কাণ্ডে দেশজোড়া প্রতিবাদকে দমাতে সেনা নামানোর হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তা নিয়ে এবার ওয়াশিংটন ও পেন্টাগনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছল।
ট্রাম্প প্রশাসন এবং সেনাকর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য এতটাই তীব্র আকার নিয়েছে যে সেনার শীর্ষকর্তাদের পদত্যাগের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। তা মার্কিন সেনাবাহিনীর মর্যাদারক্ষার ক্ষেত্রেও তা ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
মার্কিন প্রশাসন বা পেন্টাগনের মধ্যে এ ধরনের দ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিককালে ট্রাম্পের আমলে তা চরম আকার নিয়েছে জর্জ ফ্লয়েডের খুনের ঘটনার পর। ২৫ মে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের খুনের পর প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে গোটা আমেরিকা। তবে প্রতিবাদীদের দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা নামানোর হুমকিতে চিড় ধরেছে মার্কিন প্রশাসন ও পেন্টাগনের সম্পর্কে।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর পিছনে রয়েছে ট্রাম্পের ‘জঙ্গি’ মনোভাব। নিজের দেশের নাগরিকদের দমন করতে সেনার ‘অসীম শক্তি’কে ব্যবহারে ট্রাম্প কখনই পিছপা নন। তবে আদৌ তাতে সায় নেই সেনাকর্তাদের। ট্রাম্পের এই মনোভাবে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় পেন্টাগন। সেনার শীর্ষকর্তারা বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হতে দিতেও রাজি নন। উল্টে পেন্টাগনের মতে, একমাত্র অত্যন্ত জরুরি পরিস্থিতিতেই সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো উচিত। আর এতেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে পেন্টাগনের সম্পর্কের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
None stuck in #Bengal wants to leave Bengal as @MamataOfficial has ensured food for all here whereas Bengali labourers stuck in BJP ruled states, are getting desperate to return home as they are not getting food in those states ! Admit the truth , Mr. @jdhankhar1 ! pic.twitter.com/0AxUJSqGkZ
— Sudip Sarkar (@SudipCares) June 2, 2020
উত্তেজনার আঁচ পৌঁছছে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্দরেও। ওয়াশিংটনের সেনা নামানোর বিষয়ে প্রকাশ্যেই দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ডিফেন্স সেক্রেটারি মার্ক এসপার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনার এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার ওভাল অফিসে এক বৈঠকে ট্রাম্পের দাবি ছিল, ওয়াশিংটনে ১০ হাজার সেনা পাঠানো হোক। তবে তাতে সায় ছিল না এসপারের। বরং বিভিন্ন স্টেট গভর্নরের দাবি মেনে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর প্রস্তাব করেছিলেন তিনি। যা সরাসরি ট্রাম্পের সেনা নামানোর মতের বিরুদ্ধাচরণ। এর পর হোয়াইট হাউসের কাছে সেন্ট জর্জ গির্জার সামনে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোটো তোলার বিষয়েও আক্ষেপ করেছেন এসপার। এমনকি প্রতিবাদীদের দমনে দু’শতক পুরনো বিদ্রোহ আইনের প্রয়োগ করার ট্রাম্পের মতেরও বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন তিনি। গোটা বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস থেকে সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছিল এসপারকে। যদিও শনিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জানান, এসপারের উপরে এখনও আস্থা রয়েছে ট্রাম্পের।
গত রবিবার ওয়াশিংটনের হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর বেশ কয়েকটি সেনা ইউনিটকে রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নেন এসপার। ওই ঘটনার পর বিষয়টি কার্যত মিটে গিয়েছে বলে মনে হলেও, আদতে তা হয়নি।
শুধুমাত্র এসপারই নন, ট্রাম্পের চিন্তা বাড়িয়েছেন প্রথম ডিফেন্স সেক্রেটারি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জিম ম্যাটিসও। চলতি সপ্তাহে একটি সংবাদপত্রে ম্যাটিস লিখেছেন, নাগরিক সমাজ উত্তাল হলে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা স্থানীয় প্রসাসনের। সেই সঙ্গে পরোক্ষে ট্রাম্পকে খোঁচা দিয়ে তাঁর উক্তি, ওয়াশিংটনে যেটা দেখা গিয়েছে, সে রকম সামরিকভাবে উত্তর দিলে তাতে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, একটি ভ্রান্ত দ্বন্দ্ব— নাগরিক সমাজ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে!
বিক্ষোভ দমনে সেনার ব্যবহার নিয়েও পেন্টাগন কর্তাদের মধ্যে চিন্তা ছড়িয়েছে। আমেরিকার রাস্তায় প্রতিবাদ দমনে সেনার ব্যবহার নিয়ে ইতিমধ্যে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে বৈঠক করেছেন পেন্টাগনের জয়েন্ট চিফ চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মাইলি। গোটা আবহে কার্যত অস্বস্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন।