দেশ বিরোধী তকমা পেল সংবাদ সংস্থা পিটিআই।

এবার জাতীয়তা বিরোধী তকমা তকমা জুটল সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই)-র। এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক বা সরকারের নীতির বিরোধীতা করা ছাত্রছাত্রী বা নাগরিক আন্দোলনকে ‘জাতীয়তাবিরোধী’ বা দেশদ্রোহী বলে দেগে দিয়ে মামলা করার ভুরি ভুরি নজির ছিল মোদী সরকারের আমলে। এবার তার সঙ্গে যোগ হল দেশের প্রথম সারির সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই)-এর।

জানা গিয়েছে, লাদাখে চিন-ভারত সীমান্তের টানাপোড়েন সংক্রান্ত কিছু খবর ও সাক্ষাৎকার প্রকাশের জেরে পিটিআইকে বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন বন্ধের হুমকি দিয়ে আজ চিঠি পাঠিয়েছে প্রসার ভারতী। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘এমন জাতীয়তাবিরোধী খবর পরিবেশনের কারণে পিটিআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায় না।’’ দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করলেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি পিটিআই-এর তরফ থেকে।
লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে সরকারকে বিঁধেছিলেন রাহুল গাঁধী। বিদেশ মন্ত্রক পরে লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশের কথা ঘুরিয়ে মেনে নিলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি ছিল, ‘চিন ভারতের এলাকায় ঢোকেনি।’ কিন্তু বেজিংয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রিকে উদ্ধৃত করে পিটিআই ইঙ্গিত দেয় ‘চিনা অনুপ্রবেশের’। বিক্রম বলেছিলেন, ‘‘ভারতের আশা, শীঘ্রই নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে পিছু হটবে বেজিং।’’ যার মানে চিন ঢুকেছিল ভারতীয় ভূখণ্ডে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়েইডং-এরও একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেখানে সান ১৫ জুনের সংঘর্ষের দায় ভারতের ঘাড়ে চাপান। তিনি ভারতের পদক্ষেপকে ‘দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’ বলেও মন্তব্য করেন।
সূত্রের দাবি, সরকারি সংস্থা প্রসার ভারতী এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই চটেছে পিটিআইয়ের উপর। তবে সরাসরি বিবৃতি না-দিলেও তাদের গায়ে ‘জাতীয়তাবিরোধী’ তকমা লাগার পিছনে যে এই দু’টি সাক্ষাৎকার, তা মেনে নিয়েছে পিটিআই। অন্দরের খবর, চিনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ভারতের স্বার্থ জড়িত এমন কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। কিন্তু জবাব দেননি রাষ্ট্রদূত। এর উল্লেখ প্রতিবেদনে না-থাকায় বিতর্ক বেড়েছে।

তবে প্রসার ভারতীর এই ধরনের বক্তব্য বহু বর্ষীয়ান সাংবাদিকের কাছেই অনভিপ্রেত লেগেছে। কারণ কোনও খবর ‘জাতীয়তাবিরোধী’ কি না, তা দেখার দায়িত্ব প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের। তাই প্রসার ভারতীর এই হুমকির পিছনে তাই কেন্দ্রের হাত রয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। ইউপিএ জমানার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি যেমন টুইটে অভিযোগ করেছেন, ‘‘প্রসার ভারতী অনেক দিন ধরেই আরএসএস সমর্থিত ‘সমাচার ভারতী’-কে তুলে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই ওরা পিটিআই-কে ‘জাতীয়তাবিরোধী’ তকমা দেওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’
পিটিআই এই মুহূর্তে দেশের বৃহত্তম সংবাদ সংস্থা। মূলত অলাভজনক সমবায়। ৫০০-রও বেশি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি পিটিআই-এ প্রায় সাত কোটি টাকার বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন রয়েছে প্রসার ভারতীরও।

তবে এর আগেও ১৯৭৬-এ জরুরি অবস্থার সময়ে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন বন্ধের হুমকি দিয়ে পিটিআই-সহ দেশের চারটি অলাভজনক সংবাদ সংস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্র!
বিতর্কে আলাদা করে নাম উঠে আসছে প্রসার ভারতীর সিইও শশিশেখর ভেম্পতির কথাও। মোদি-ভক্ত বলে যাঁর বিশেষ পরিচিতি আছে। মোদীকে সমালোচনা করায় একবার তুলোধনা করেছিলেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে। আবার দিল্লির হিংসা নিয়ে ‘একপেশে খবর’ করেছে বলে
প্রসঙ্গত, প্যারিস-ভিত্তিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)’ ১৮০টি দেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যে তালিকা এ বছর প্রকাশ করেছে, ভারত তাতে ১৪২ নম্বরে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন