উরগেন শোদন। সাকিন লাদোখের নায়য়োমা গ্রাম। সিন্ধু নদের তীরের গ্রামটির পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)। গ্রামটিতে মূলত পেশায় পশুপালক তিব্বতি যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষের বাস। উরগেনও এই জনগোষ্ঠীরই মানুষ ও একজন স্থানীয় বিজেপি নেত্রী। আগে তিনি ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। এখন বিজেপির টিকিটে জিতে আসা নায়য়োমা ব্লক উন্নয়ন পর্ষদের সভানেত্রী।
এই উরগেন শোদনই গত ১১ জুন বেলা ১১ টা ৭ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। সেই পোস্টে উরগেন লেখেন, ‘‘গালওয়ানে যা চলছে তা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। আর এ সমস্তটাই হচ্ছে সীমান্ত এলাকা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা না থাকায়।”তখনও গালওয়ানের চিনা বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় ফৌজের সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেনি। তবে যে দিন উরগেন ওই পোস্ট করেছেন, তার আগে থেকেই গালওয়ানে দুই সেনার অবস্থান ঘিরে পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ওই দিনই বেলা ১১টা ৪৯ মিনিট থেকে দুপুর ২টো ৫৮ মিনিটের মধ্যে আরও পাঁচটি পোস্ট করেন উরগেন। প্রতিটি পোস্টেই ছবি এবং ভিডিয়ো-সহ উল্লেখ করা হয়েছে, মাসের পর মাস ধরে কী ভাবে চিনা বাহিনী ভারতের নাকের ডগায় একটু একটু করে ভারতীয় ভূখণ্ড গ্রাস করে নিয়েছে এবং সেখানে চিনের অধিকার কায়েম করেছে। কিন্তু তার পরও নিষ্ক্রিয় থেকেছে ভারত।
একটি পোস্টে ছবি-ভিডিয়ো দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের মে মাসে কী ভাবে প্রায় ১৫০ ভারী মেশিনপত্র নিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর রাস্তা বানিয়েছে চিনা সরকার। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, সার সার চিনা লরি, মাটি কাটার বড় বড় জেসিবি মেশিন-সহ রাস্তা তৈরি করার ভারী যন্ত্রপাতি কাজ করছে প্রকাশ্যেই। ছবিটি নিয়ন্ত্রণরেখার লাগোয়া ফুঙগাপ গ্রামের বলে জানানো হয়েছে ওই পোস্টে। উরগেন প্রশ্ন তুলেছেন, বিনা বাধায় কী ভাবে নিয়ন্ত্রণরেখার গায়ে এ ভাবে রাস্তা তৈরি করছে চিন? পরের পোস্টেই ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই রাস্তার ছবি পোস্ট করেছেন উরগেন। ঝকঝকে মসৃণ রাস্তা।
#sundayvibes#nanapatekar#wentsahidjawansvillage#nanapatekar#met#susantsinghrajput’sfamily🇨🇮💐🙏😥🇨🇮 pic.twitter.com/VUZEXljyP0
— aamarsakal.com (@aamarsakal) June 28, 2020
এর পরেই উরগেন গত বছর ৬ জুলাইয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর আগের বছরের পোস্টের ছবি দিয়ে জানিয়েছেন, “সবাই সাবধান হোন। আমাদের দেশের জন্য উদ্বেগের খবর। ৬ জুলাই ২০১৯, ডেমচক, কোয়ুল দুংটি এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ এক জায়গায় হয়ে দলাই লামার জন্মদিন পালন করি। আমরা সেই উৎসবের অংশ হিসাবে ভারতের জাতীয় পতাকা, বৌদ্ধ পতাকা এবং তিব্বতের পতাকা উত্তোলন করি। এই বছরও তা করি। তার পরেই চিনা বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার আমাদের ভুখণ্ডের মধ্যে ঢুকে আসে। এসে আমাদের শাসায়। কেন আমরা পতাকা উত্তোলন করেছি। আমার প্রশ্ন, চিনাদের সাহস কী করে হয় আমাদের মাতৃভূমির মধ্যে ঢুকে আমাদের শাসানোর?”
এর পরের পোস্টেই তিনি ছবি দিয়ে দাবি করেছেন, কী ভাবে নিজেদের পশুপালন ক্ষেত্র থেকে পঞ্চাশ গজ পিছনে সরে আসতে হয়েছে ওই এলকার মানুষদের। ওই ১১ জুনেই উরগেনের শেষ পোস্ট। সেখানে তিনি ছবি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, ‘‘এ বছর জানুয়ারি মাসে আমরা আমাদের পশুপালনের জমিতে পশু নিয়ে গেলে চিনা সেনা প্রশিক্ষিত কুকুর বাহিনী নিয়ে মেষ এবং ইয়াক পালকদের তাড়া করে সরিয়ে দেয়। পশুপালকদের শাসায়, তাঁরা ওই জমিতে গেলে তাঁদের ধরে নিয়ে যাবে চিনা বাহিনী।”
এর আগে চলতি বছর এপ্রিল মাসেও তিনি নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় বিভিন্ন মহলের চাপে সেই পোস্ট তিনি মুছে দেন। তিনিই ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসাবে প্রথম চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক করেন বিভিন্ন মহলকে।