মহিষাদলের ভিক্ষুক ছাত্রীর পুড়লো বাড়ি, অন‍্যের বাড়িতে কাটছে রাত ।

হলদিয়াঃ ভিক্ষা করেই দিন চলত মহিষাদলের ভিক্ষুক ছাত্রী সরস্বতী পন্ডার। মা ও মেয়ে রোজ ভিক্ষা করে যা উপার্জন করতো তা দিয়েই মেরেকেটে চলতো সংসার। থাকার বাসস্থান বলতে ছিল একটি দোচালা টালির বাড়ি। কিন্তু তাও আবার গত মঙ্গলবার আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। তাই এখন মহিষাদলের এই ছাত্রী ও তার মায়ের থাকার অন‍্যতম ঠিকানা হয়েছে প্রতিবেশীদের বাড়ি।
মহিষাদলের ইটামগরা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঞ্চনপুর জলপাই উপেন্দ্র মিলন বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সরস্বতী। বয়স মাত্র দশ বছর। বাড়িতে মা শঙ্করী পন্ডা ছাড়া আর কেউই নেই। বাবা সেই ছোট্ট বেলায় মা ও মেয়েকে ছেড়ে অন্যত্র থাকেন। এর মাঝে মা ও মেয়ে দুবেলা-দুমুঠো অন্ন জোগানোর জন্য ভিক্ষাবৃত্তিকে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। এক বেলা স্কুলে এবং অপর বেলা ভিক্ষা করেই দিন কাটে মহিষাদলের ছোট্ট সরস্বতীর। একবেলা কোনরকম দুমুঠো অন্ন জুটলেও আরেক বেলা কি খাবে তা নিয়ে ভাবতে হয় তাদের। দুচোখের আলোয় ভরা স্বপ্ন থাকলেও সেই স্বপ্নের মাঝে আর্থিক অনটন কোথাও যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই স্বপ্নকে সফল করতে মহিষাদলের সরস্বতী পড়াশোনার পাশাপাশি ভিক্ষা করা তার দৈনন্দিন তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। সকালের সূর্য উঠলে স্কুলের ব্যাগটা নিয়ে সরস্বতী বেরিয়ে পড়ে স্কুলের পথে। আবার স্কুল ছুটি হলে মায়ের সাথে সরস্বতীও বেরিয়ে পড়ে ভিক্ষে করতে। মহিষাদলের সিনেমা মোড়, কাপাসএড়িয়া বাস স্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের দেখা যায় ভিক্ষা করতে। কিন্তু গত কয়েকদিন লকডাউনের ফলে একেবারেই ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন মা ও মেয়ে। প্রতিবেশীদের দান সামগ্রী দিয়েই কোনরকম লকডাউনের মাঝে চলছিল সংসার। গ্রামের এক কোনে দোচালা টালির বাড়িতে কাটছিল দুঃখে ভরা রাত। আর এর মাঝেই কোথাও যেন আগুনে ছারখার হয়ে যায় তাদের থাকার একমাত্র বাসস্থানটুকুও। ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিটের জেরে মঙ্গলবার বিকেলে তাদের বাড়ি আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের এরবাড়ি- ওরবাড়িতেই কাটছে রাত। খাবে কি বা এরপর থাকবে কোথায় তাও এখন ভাবতে রাত কুলোচ্ছে না সরস্বতী ও শঙ্করীর। ইতিমধ্যে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি ও বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফ থেকে তাদের বেশকিছু সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু থাকবে কোথায়? সেই প্রশ্ন জাগছে এখন মহিষাদলের ভিক্ষুক ছাত্রীর স্বরস্বতীর মনে। প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়ে মেয়ে সরস্বতী ও মা শঙ্করী বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই যাতে আমাদের থাকার ব্যবস্থাটা কোনভাবে করে দেওয়া হয়”। এবিষয়ে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক কুমার চক্রবর্তী বলেন, “আমরা ওনাদের পাশে রয়েছি। আমরা যতটা সম্ভব সাহায্য করেছি। এরপর বাড়ি তৈরির জন্য ওনাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে”।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন