নিজস্ব প্রতিনিধি : নুসরত জাহান হত্যা মামলায় মাদ্রাসার শিক্ষক সিরাজউদদৌলা-সহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিল বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার বেলায় বিচারক মহম্মদ মানুনুর রশিদ নুসরত হত্যা মামলায় ১৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। রায় পড়তে সময় লাগে ১২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড। রায় শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন দোষীরা।
রায়দানকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশের ফেনি ও সোনাগাজির সদর উপজেলা। এ দিন সকাল থেকেই আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় র্যাফ। রাস্তার মোড়ে বসানো হয় পুলিশ পিকেট। নুসরাতের বাড়িতেও পুলিশি প্রহরা বসানো হয়।
সরকারপক্ষের আইনজীবী হাফিজ আহমেদ বলেছেন, “আজকের রায় ঐতিহাসিক। বাংলাদেশ প্রমাণ করে দিয়েছে এই ধরনের অপরাধের কোনও ক্ষমা হয় না। অপরাধীরা তাদের যোগ্য শাস্তি পেয়েছে।”
এদিকে, রায়দানের পর আদালতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই আসামিরা তুমুল চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে পুলিশ পাহারায় আইনজীবীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। উচ্চ আদালতে আপিল করবে তারা বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী৷
চলতি বছর বাংলাদেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল সোনাগাজির ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরত জাহানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। গত ২৭ মার্চ সোনাগাজির ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রীকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করে শিক্ষক সিরাজউদদৌলা। তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নুসরতের মা।
গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় নুসরাতকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। হাত–পা বেঁধে, তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৮০% পোড়া নিয়ে, গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সে সময় মেলেনি। ঘটনার পাঁচ দিন পরেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া এবং তদন্তে উদাসীনতার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। নুসরতের পরিবারের দাবি মেনে প্রথমে সোনাগাজি থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে বদলি করা হয়। এই ঘটনায় কারণে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় আন্দোলন। পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টরা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বাসভবন পর্যন্ত মানব মিছিলও করা হয়। সব মিলিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সাড়া ফেলে দেয় বাংলাদেশ৷