নিজস্ব প্রতিনিধি : ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়া তিন বোন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তাঁরা তিন বোন মিলে তাঁদের বাবাকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ আছে। ঘটনার সময় বাবা মিখাইল খাচাতুরন ঘুমিয়ে ছিলেন। তিন বোনের একজন হাতুড়ি, একজন ছুরি ও একজন পিপার স্প্রে নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। পরে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, এমন ঘটনার পরও তিন বোনের প্রতি সমব্যথী রাশিয়ার মানুষ। তাঁদের মুক্তি চেয়ে ইতিমধ্যে প্রায় তিন লাখেরও বেশি স্বাক্ষর অনলাইনে জমা পড়েছে।
আমার সকাল : তিন বোতল মধু জীবনটাকেই তিক্ত করে দিল
গত বছরের জুলাইয়ে মস্কোর ওই নৃশংস খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বহু মাস। তবে ওই কিশোরীদের নিয়ে আলোচনা থিতিয়ে পড়েনি। তাঁদের বেকসুর খালাসের দাবিতে এখন উত্তাল রাশিয়া। জমা পড়েছে তিন লক্ষেরও বেশি আবেদন। চলছে মিছিল, সহমর্মিতা দেখিয়ে কবিতা পাঠ বা থিয়েটার।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম জুড়েও ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়া কাচাটুরিয়ান— এই কিশোরী বোনদের নিয়ে খবরের ছড়াছড়ি। কিন্তু কেন? সে দেশের মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, ওই কিশোরীরা অপরাধী নন, নিজের বাবার কাছেই শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিতা।
আমার সকাল: অতিরিক্ত ভালোবাসে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আদালতের দারস্ত স্ত্রী
মেয়েদের আইনজীবী জানান, এই ঘটনা তাঁরা ঘটিয়েছেন আত্মরক্ষার্থেই। এটা বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের মুক্তি দেওয়া উচিত। আইনজীবী আশা করছেন, তাঁরা মুক্তি পাবেন। কারণ, তাঁদের বাবা যে তাঁদের ওপর নির্যাতন চালাতেন, সেটি প্রমাণিত হয়েছে।
তদন্তকারীরাও জানিয়েছেন, ২০১৪ থেকেই ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়ার উপর যৌন নির্যাতন করতেন ৫৭ বছরের মিখায়েল কাচাটুরিয়ান। শুধু তা–ই নয়। মেয়েদের বন্দি করে রেখে তাঁদের উপর চলত মারধর, এমনকি মানসিক নির্যাতনও। ঘটনার রাতে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন না তাঁদের মা অরেলিয়া ডানডাক। ২০১৫–তে তাঁকে মস্কোর ওই ফ্ল্যাট থেকে বার করে দিয়েছিলেন মিখাইল। তার পর থেকে মেয়েদের নিয়েই ফ্ল্যাটে থাকতেন মিখাইল। ঘটনার সময় অ্যাঞ্জেলিনা, মারিয়া ও ক্রিস্টিনার বয়স ছিল যথাক্রমে ১৮, ১৭ ও ১৯।
আমার সকাল: রহস্যের যবনিকা টেনে আমেরিকা জানালো ‘জিহাদের যুবরাজ’ ওসামা-পুত্র হামজ়া বিন লাদেন নিহতই
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের ২৭ জুলাইয়ে, ঘটনার রাতে অ্যাঞ্জেলিনার হাতে ছিল হাতুড়ি, ক্রিস্টিনার কাছে ধারালো ছুরি এবং মারিয়া নিয়ে এসেছিলেন পেপার স্প্রে। সে সব দিয়েই ঘুমন্ত বাবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। অভিযোগ, হাতুড়ির ঘায়ে জখম করে, পেপার স্প্রে ছিটিয়ে মিখায়েলকে কাবু করে ছুরি দিয়ে বার বার আঘাত করে খুন করেন ওই কিশোরীরা। এর পর ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশে খবর দেন তাঁরা। সেখানেই গ্রেফতার করা হয় ক্রেস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা ও মারিয়াকে।
রাশিয়ার পুলিশ সাধারণত পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে ‘পরিবারের ব্যাপার’ বলে গণ্য করে থাকে, ফলে আসলে কোন সহায়তাই করে না।
এই বোনদের মাও অতীতে মি: খাচাতুরিয়ানের কাছে মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, পুলিশের কাছেও গিয়েছিলেন। প্রতিবেশীরাও তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাকে প্রচণ্ড ভয় পেতেন। কিন্তু এসব ঘটনায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিয়েছে, এমন নজির নেই।
হত্যাকাণ্ডের সময় কিশোরী বোনদের মা তাদের সঙ্গে বসবাস করতেন না এবং মেয়েদের সঙ্গে মায়ের যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন মি: খাচাতুরিয়ান।