পুরুলিয়া ১২ মেঃ আশঙ্কা থাকলেও সে ভাবে বড় কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি পুরুলিয়ার নির্বাচনে। সারাদিন ধরে প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম মূল ভিলেনের কাজ করলেও তাতে উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি ভোটারদের। পুরুলিয়া শহরের বি এড কলেজে মোট চারটি বুথ করা হয়। এখানে ভোট দিতে আসা রাঘবপুর মোড়ের বাসিন্দা জয়ন্ত মুখার্জী এবং শুক্লা মুখার্জী বলেন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদই বাড়ি থেকে বার হয়ে যান তারা। সাতটায় সবার আগে ভোট দিয়ে বাড়িমুখো হন এই দম্পতি। শুধু এরাই নন এদিন ভোর থেকেই কার্যত জেলার ভোটকেন্দ্রগুলিতে লম্বা লাইন দেখা যায়। সবাই এক কথাতেই বলেন প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে সকাল সকাল ভোটটা দিয়ে দিতে চান তারা। জেলা নির্বাচন দফতর থেকেও জানানো হয় বেলা এগারোটা পর্যন্ত পুরুলিয়ায় পড়ে যায় ৩৬ শতাংশ ভোট। তবে বেশ কিছু জায়গায় ইভিএম মেশিন ও ভিভিপ্যাট মেশিনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভোট শুরু হতে দেরী হয়। নির্বাচন দফতর থেকে অবশ্য জানানো হয় সকাল সাতটাতে ৮০ শতাংশ বুথেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যায়। বেলা একটার মধ্যে পুরুলিয়া ৫৭ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়ে যায়। দুপুরের দিকে খানিকটা ভাটা পড়লেও বিকেলের দিকে আবার মানুষকে দেখা যায় বুথগুলিতে। বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ ভোট পড়ে যায় পুরুলিয়ায়। সকাল থেকে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও বেলা দশটা নাগাদ হঠাতই আড়শার মিশিরডিতে ছড়িয়ে যায় ব্যাপক উত্তেজনা। এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী অযথা লাঠিচার্জ করেছে এই দাবী করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। তারা বলেন মহিলারা ভোট দেবার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এসময়ই কোন কারণ ছাড়াই সিআরপিএফ লাঠি দিয়ে তাদের সরাতে শুরু করে। বিক্ষোভ চলাকালিন ভোট বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের জমায়েতের মধ্যে আরেক দফা লাঠি চার্জ করে সিআরপিএফ। এরমধ্যেই সেক্টর অফিস থেকে ছুটে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। চলে আসেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরাও। তারা গ্রামের মানুষকে বোঝানোর পর আবার শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোট চলাকালিন পুরুলিয়ার পাড়াতেও দেখা দেয় উত্তেজনা। এখানকার ৪২ ও ৪৩ নং বুথে প্রিসাইডিং অফিসার ঠিক মতো ভোট পরিচালনা করতে পারছেন না বলে হট্টগোল শুরু করে বিরোধী এজেন্টরা। পরে সেক্টর অফিসার গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সরিয়ে দেওয়া হয় এই দুটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসারদের। জেলায় ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে বলে অবশ্য জানানো হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন রঘুনাথপুরে দশটি বুথ দখল করে ছাপ্পা দেবার চেষ্টা চালায় তৃণমূল। তবে তারা তা রুখে দেন। কোন বুথে পুর্ননির্বাচনের দাবী তারা করছেন না। এদিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অবশ্য ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন এই বাহিনী ভোটারদের বিজেপির পক্ষে ভোট দেবার জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। বিজেপিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে ভোটে ছাপ্পা চালাবার চেষ্টা করে। তবে বেশিরভাগ জায়গাতেই তৃণমূল ও সাধারণ মানুষ তা রুখে দেয়। এদিন ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবার পর সন্ধ্যে নাগাদ স্ট্রং রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ভোট কর্মীরা। রাত পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।