নিজের বিয়ের বাজার করতে গিয়ে চলে গেল শ্রাবণী

দশ বছরের সুন্দর সম্পর্কের পূর্ণচ্ছেদ পড়ল কয়েক সেকেন্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদন— নতুন সংসার সাজানোর স্বপ্নে মশগুল ছিলেন তাঁরা। অনেক আশাকে সামনে রেখে ঘর বাঁধার স্বপ্ন পরিণতির দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু আচমকায় কপালের ফেরে সব কেমন যেন ওলোট-পালোট হয়ে গেল। সুন্দর স্বপ্নে ভেঙে খানখান হয়ে গেল। হতাশা ছাড়া আর কি বা থাকতে পারে জীবনে। দশ বছরের সম্পর্কে এভাবে পূর্ণচ্ছেদ নেমে আসবে, তা তাঁরা কখনও ভাবেননি। মর্মান্তিক হলেও বাস্তবে এমনটাই ঘটল। আর কয়েক মাসের মধ্যেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল দু’জনের। রবিবার রাতে হবু স্বামী অরিৎ দাসের সঙ্গে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলেন বারাসত ন’পাড়ার শ্রাবণী পাল (২৩)। কিন্তু মাঝপথে লরির ধাক্কায় প্রাণ হারালেন তিনি। একসঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়েও বেঁচে গিয়েছেন অরিৎ। তাঁর আঘাতও গুরুতর নয়। এমনকি, যে মোটরবাইকে চেপে তাঁরা কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলেন, অক্ষত রয়েছে সেটিও। প্রায় ১০ বছরের সম্পর্কে এই প্রথম ছেদ ঘটল।

শ্রাবণীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে লরিচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আকস্মিক এমন দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারিয়ে হতবাক শ্রাবণীর পরিবার।

স্নাতক শ্রাবণী এলাকায় টিউশন পড়াতেন। পাড়ায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সকলে তাঁকে মিষ্টি বলে ডাকতেন। শ্রাবণীর বাবা সমীর পাল মৃৎশিল্পী। শ্রাবণী তাঁর ছোট মেয়ে। অরিতেরও বাড়ি বারাসত ন’পাড়ায়। সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছেন তিনি। দুই বাড়িতেই অবাধ যাতায়াত ছিল দু’জনের। ফেসবুকে তাঁরা বিয়ে করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, কলোনি মোড়ে উড়ালপুলে ওঠার মুখে একটি বালি বোঝাই লরি অরিতের মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। রাস্তার দিকে ছিটকে পড়েন শ্রাবণী। ফুটপাতের দিকে পড়েন অরিৎ। লরির চাকা শ্রাবণীর মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শ্রাবণীর মা সন্দীপা পাল। বাড়ির লোকেরা বলছেন, ‘‘রবিবার রাতে ওকে যেতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, এক দিন পরে গিয়ে কেনাকাটা করিস। ও যদি তা মেনে নিয়ে আমাদের সঙ্গে ফিরে আসত, তা হলে আজ এই দিন দেখতে হত না।’’ ঘটনার পর থেকে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন অরিৎ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন