ভারত থেকে ব্যাক অফিস সরাতে চায় বহু সংস্থাই ।

শ্রমিকের প্রাচুর্যের কারণে এতদিন আউটসোর্সিং ক্ষেত্রে ভারত ছিল বিশ্বের আকর্ষণীয় গন্তব্য। সম্ভবত, সেরাও। উন্নত দেশের সংস্থাগুলি খরচ কমাতে তাদের ব্যাক অফিসের যাবতীয় কাজ কারবার ভারত থেকে অনেক সস্তায় করিয়ে আসছে। বহু বছর ধরে চলা সংস্থাগুলির এই দস্তুরের এবার সম্ভবত বদল হচ্ছে। করোনা আবহে লকডাউনের জেরে বহু সংস্থা বেঙ্গালুরু থেকে কাজ তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের দেশে স্থায়ীভাবে করানোর পাশাপাশি কৃত্রিম মেধাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মী সংখ্যাও কমিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছে।
সংস্থাগুলির এধরনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভারতের পক্ষে খারাপ খবর। ন্যাসকম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারতে আউটসোর্সিং ক্ষেত্রে কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ লক্ষ এবং সামগ্রিক আয় ছিল ১৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি, যার পুরোটাই রপ্তানি। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারতের হাত থেকে এই বিপুল বাজারের যদি অল্পও বেরিয়ে যায়, তাতে দেশের আয় যেমন কমবে, তেমনই প্রচুর মানুষের কাজ হারানোরও আশঙ্কা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব বিরাট হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যত পেশাদার রয়েছেন, তার অন্তত ৫০ শতাংশই বিপিও-তে। তাছাড়া বিপিও-তে কর্মরতদের অনেকের যোগ্যতাই অন্য ক্ষেত্রে কাজ পাওয়ার মাপকাঠির থেকে কম। তাই বিপিও ক্ষেত্রে কর্মচ্যুতদের অন্য ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানেও সমস্যা হতে পারে আশঙ্কা অনেক বিশেষজ্ঞের।
করোনা পরিস্থিতিতে বাধানিষেধ বলবৎ হওয়ায় বিদেশি সংস্থাগুলির জন্য আউটসোর্সিং ও ব্যাক অফিসের কাজ একপ্রকার বন্ধই বলা যেতে পারে। যেহেতু আউটসোর্সিং কাজের একটা বড় অংশ জুড়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গোপনীয় তথ্য নাড়াচাড়া করতে হয়, তাই এ ক্ষেত্রে কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম করানোটাও কঠিন। কারণ তথ্যের গোপনীয়তা বড় বালাই।
তবে পরিচালনা অব্যাহত রাখতে অনেক সংস্থা অফিসেই কর্মীদের রেখে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভোডাফোন ইন্ডিয়া তাদের সমস্ত ডেটা কেন্দ্রে কর্মীদের সাময়িক থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। টেলিকম সংস্থা স্পার্ক নিউজিল্যান্ড এবং তাইওয়ানের কম্পিউটার নির্মাতা এসার ফিলিপিন্সের যে সংস্থা মারফৎ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গ্রাহক পরিষেবা দেয়, তারা ওই সংস্থাকে কোনও গ্রাহককে ফোন করতে নিষেধ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার টেলস্ট্রা ও অপটাস এবং ব্রিটেনের ভার্জিন মিডিয়া সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, এই সব কাজের জন্য তারা নিজেদের দেশে কয়েক হাজার কর্মী নিয়োগ করবে।
তবে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে সবথেকে বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে কর্মীর বদলে কৃত্রিম মেধার বহুল ব্যবহার। এত দিন ভারতের মতো দেশে আউটসোর্সিং সংস্থাগুলি লক্ষ লক্ষ কর্মী নিয়োগ করে যে কাজ করত, তারা সেই কাজই করবে অনেক কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে। ফলে, বহু মানুষের কাজ যাবে।
ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মাইকেল সিনকোটা বলেন, ‘কৃত্রিম মেধা কখনও ধর্মঘট করে না, এটা ২৪X৭ ভিত্তিতে কাজ করতে পারে এবং কাজের জটিলতাও অনেক কম হয়।’
টেলস্ট্রা এখন গ্রাহক পরিষেবায় কৃত্রিম মেধা ব্যবহার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সংস্থার সিইও অ্যান্ডি পেনের মন্তব্য, ‘আমাদের ব্যবসাকে আরও ডিজিটাইজ ও স্বয়ংক্রিয় করার জন্য কৃত্রিম মেধা বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে, যা আমরা ব্যবহার করব।’
ফলে করোনাভাইরাস বহু দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ ও মডেলেও সুদুরপ্রসারী প্রভাব আনতে চলেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন