নিজস্ব প্রতিনিধি— কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল ঘোষণার পর থেকে দেশের পাশাপাশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলিতেও বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। তবে ভারত যেভাবে রাতারাতি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করছে, তাতে সমালোচনা করেছে অনেক সংবাদপত্রই। তাদের সম্পাদকীয় কলামে ৩৭০ ধারা বাতিলের কারণ হিসেবে নানা দিক তুলে ধরেছে।
আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রে লাফায়েত্তি কলেজের অধ্যাপক হাফসা কাঞ্জওয়াল লিখেছেন, মোদী সরকার সংবিধান বিরোধী কাজ করেছে। খুব পরিকল্পিতভাবে একটি রাজ্যে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠ করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর লেখায় আছে, ভারতীয়রা এখন কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবেন। স্থানীয় মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। ইজরায়েল যেভাবে প্যালেস্তিনীয়দের তাড়িয়ে দিয়েছে, সেই একই পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাশ্মীরে বিরাট সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সংখ্যা ৫০ লক্ষের বেশি। কাশ্মীরের বিরাট এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে মিলিটারির ক্যান্টনমেন্ট, ক্যাম্প আর বাঙ্কার। ভারতের রুলিং পার্টির বহুদিনের পরিকল্পনা হল, সেখানে অনেক হিন্দুর বসতি করানো। তাহলে রাজ্যের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনতার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে সহজে দমন করা যাবে।
আল জাজিরা টিভিতে আথের জিয়া নামে এক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ৩৭০ ধারার বিলোপ করে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে আরও এক ধাপ এগোল মোদী সরকার। তা নিয়ে মোদী ১৫ অগাস্টের ভাষণে আস্ফালন করবেন। তাঁর দক্ষিণপন্থী সরকার দাবি করবে, তারা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। মোদী সকলকে বোঝাতে চাইবেন, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ভীত নন।
ব্রিটেনের গার্ডিয়ান নামে অপর একটি পত্রিকায় সাংবাদিক জ্যাসন বার্ক কাশ্মীর সম্বন্ধে তাঁর ধারণা জানিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, কাশ্মীরের যুবকরা আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ন’য়ের দশকে কাশ্মীরে অনেক খুনখারাপি হয়েছে। সেই ভয়াবহ দিনগুলির কথা প্রবীণরা জানেন। তরুণ প্রজন্ম সেই সময়টা দেখেনি। বড়দের মুখে গল্প শুনেছে। যারা ন’য়ের দশকের হানাহানি দেখেছে, তারা সহজে কোনও সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দেয়নি। কিন্তু এখনকার যুবকরা তাদের মতো নয়। বহু তরুণ ভাবছে, এতদিনে সময় এসেছে। এর পরিণতি কাশ্মীর ও ভারতের পক্ষে হয়তো ভালো হবে না।
জেরুজালেম পোস্টে পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞ সেথ ফ্রাঞ্জম্যান লিখেছেন, কাশ্মীর ইস্যু মানে কেবল আর্টিকেল ৩৭০ নয়। তার গুরুত্ব অনেক বেশি। তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সম্পর্ক আছে। ভারতের সঙ্গে ইজরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তারা নিজেদের সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক করে তুলতে চায়।