এভারেস্টের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ায় আরোহনের সময়ে আবর্জনা ফেলে দিয়ে আসেন পর্বতারোহীরা।

আমার সকাল : এভারেস্টের চূড়ায় বিভিন্ন জায়গায় পর্বতারোহীদের রেখে আসা আবর্জনার স্তূপ পাহাড় প্রমান আকার নিয়েছে। এবছর ৩৪ হাজার কেজিরও বেশি জঞ্জাল নামিয়ে এনেছে নেপাল সরকার। নেপালের এভারেস্ট রিজিওনের পরিবেশ-সংক্রান্ত দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সাগরমাথা পলিউশন কন্ট্রোল কমিটির (এসপিসিসি) অন্যতম কর্মকর্তা নিশান শ্রেষ্ঠা বলেন, ২০০৮-০৯ সাল থেকে এভারেস্টকে পরিচ্ছন্ন করার অভিযান শুরু হয়েছে।মূলত এভারেস্টের মূল বেস ক্যাম্প (৫৩৬৪ মিটার) এবং ক্যাম্প-২ (৬৪০০ মিটার) থেকে জঞ্জাল নামিয়ে আনার কাজ হয়েছে।ক্যাম্প-৩ বা ক্যাম্প-৪য়ে তুলনামূলক জঞ্জালের পরিমাণ কম।এসপিসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, সেখান থেকে জঞ্জাল নামিয়ে আনাটাও কঠিন।তাই এই সাফাই অভিযান বেসক্যাম্প থেকে ক্যাম্প-২ পর্যন্তই করা হয়। এসপিসিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে এভারেস্ট বেসক্যাম্প থেকে ৩২ হাজার ২৪১ কেজি এবং ক্যাম্প-২ থেকে ২ হাজার ৪৫১ কেজি জঞ্জাল নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। 

এসপিসিসির পক্ষ থেকে মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা ইয়াংজি দোমা শেরপা বলেন, এভারেস্টের ওপর থেকে যে সমস্ত জঞ্জাল নামিয়ে আনা হয়েছে তার মধ্যে প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন দহনশীল বর্জ্য, অদহনশীল বর্জ্য, মানব বর্জ্য, রান্নাঘরের বর্জ্য।তার মধ্যে ১৩ হাজার ৫০১ কেজি দহনশীল বর্জ্য,অদহনশীল বর্জ্য  নামিয়ে আনা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৫ কেজি।এছাড়া মানব বর্জ্য নামিয়ে আনা হয়েছে ১২ হাজার ৯৯৫ কেজি। রান্নাঘরের জঞ্জাল ছিল ৪ হাজার ১০ কেজি।সবমিলিয়ে এবছর এভারেস্ট থেকে ৩৪ হাজার ৬৯২ কেজি বর্জ্য নামিয়ে আনা হয়েছে।এসপিসিসির হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে সবমিলিয়ে (বেসক্যাম্প এবং ক্যাম্প-২) ৩২ হাজার ৬৮৮ কেজি বর্জ্য নামিয়ে আনা হয়েছিল।এ বছর এর পরিমাণ অনেকটাই বেশি।আপাতত নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত দহনশীল বর্জ্য নামিয়ে আনা হচ্ছে, সেগুলি নামচের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। মানব এবং রান্নাঘরের বর্জ্য এভারেস্ট পাদদেশে থাকা গোরোকশেপ গ্রামের বর্জ্য পরিশোধন পিটে (বিশালাকৃতির গর্ত) পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর অদহনশীল বর্জ্যগুলিকে কাঠমাণ্ডুতে মেট্রোপলিটেন শহরের রিসাইকেল ইউনিটে পাঠানো হয়।

এভারেস্টের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ায় আরোহনের সময়ে আবর্জনা ফেলে দিয়ে আসেন পর্বতারোহীরা। এসব বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কারে হাত দিয়েছে চিন। এভারেস্টের চূড়া থেকে ইতিমধ্যে সাড়ে আট টন আবর্জনা পরিষ্কার করেছে বেজিং। জানা গিয়েছে, চিন গত এপ্রিল মাস থেকে এভারেস্টের চূড়ায় জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে৷ আর এই কাজে নিযুক্ত ছিল ৩০ সদস্যের একটি দল৷ এই কাজে নিয়োজিত লোকেরা বলছেন, এভারেস্টের চূড়া থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করা ভীষণ কষ্টসাধ্য। পরিসংখ্যান বলছে, তিব্বতের দিক থেকে ২০১৭ সালে এভারেস্টে আরোহন করেছিলেন ২০২ জন অভিযাত্রী। নেপালের দিক থেকে এভারেস্টে উঠেছিলেন ৪৪৬ জন। অন্য দিক থেকেও সহস্রাধিক অভিযাত্রী এভারেস্টে উঠেছেন বা ওঠার চেষ্টা করেছেন। তাদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ফেলে আসার কারণেই এভারেস্ট চূড়ায় দূষণ ছড়িয়েছে। তিব্বতের প্রশাসন ২০১৫ সাল থেকে প্রত্যেক অভিযাত্রীকে ৮ কিলোগ্রাম আবর্জনা ফেরত আনার জন্য দুটি ব্যাগ দেয়। ২০১৪ সাল থেকে নেপাল সরকারও এই নীতি গ্রহণ করেছে। এর ফলে, দূষণের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এদিকে, এভারেস্টের পথে পরিবেশবান্ধব শৌচাগার নির্মাণে জোর দিয়েছে বেজিং।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন