ছবি তোলা তাদের জন্য স্রেফ ছবি তোলাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা, ছবি তোলার এমন তাৎপর্যের জন্যই সাংবাদিকতায় সংযোজিত হয়েছে ‘ছবি সাংবাদিকতা’ নামের স্বতন্ত্র একটি ক্যাটাগরি । আর এই ক্যাটাগরিতেই সাংবাদিকতার নোবেল প্রাইজ হিসাবে খ্যাত ‘পুলিৎজার প্রাইজ ২০১৮’ পেয়েছেন বাংলাদেশী ছবি সাংবাদিক মোহাম্মদ পনির হোসেন। রয়টার্সের হয়ে যে ৭ সদস্যবিশিষ্ট ছবি সাংবাদিকের দলটি কাজ করেছে সেই দলের একজন সদস্য হলেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ পনির হোসেন। মনোনীত ছবিগুলোর মধ্যে মোহাম্মদ পনির হোসেনের ৩টি ছবি রয়েছে
প্রথম ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে , মাত্র ৫ সপ্তাহ বয়সী মৃত সন্তানের নিথর দেহটি বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন একজন মা। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনের ফলে নৌকায় করে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নৌকাডুবিতে সন্তানের মৃত্যু হয়। মা থেকে থেকে সন্তানকে দেখছেন, মুখে চুমু খাচ্ছেন আর বিলাপ করে কাঁদছেন। মৃত সন্তানের মুখে সন্তানহারা মায়ের চুমু খাওয়ার এই মুহূর্তটিকে ফ্রেমে বন্দি করে রেখেছিলেন মোহাম্মদ পনির হোসেন।

দ্বিতীয় ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে সীমান্তের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় একদল রোহিঙ্গা অসহায় দাঁড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি তাদের সেখানে আটকে রেখেছে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে যেন তারা না পারেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন তারা। কোথাও আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছেন না। উদারতার আকাশও যেন বৃষ্টি ঢেলে দিয়ে তাদের সাথে শত্রুতা করছে। গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে এই ছবিটি তোলেন মোহাম্মদ পনির হোসেন। ছবিটি তোলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ছবি তুলতে গিয়ে তার ক্যামেরার লেন্সের ভিতর জল ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। গলা পর্যন্ত জলে নেমেও তাকে ছবি তুলতে হয়েছে।

তৃতীয় ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে,নৌকায় ভেসে নাফ নদী পাড়ি দিচ্ছেন একদল রোহিঙ্গা। তাদের গন্তব্য বাংলাদেশের দিকে। কোথাও যদি একটু মাথা গোঁজা যায়! ভেলাটি এতগুলো মানুষের ভার বহন করতে সক্ষম নয়। তবুও জীবন রক্ষার তাগিদে গাদাগাদি করে জীর্ণ ভেলায় ভেসে নাফ নদী পাড়ি দিচ্ছেন তারা। ছবিটি গত বছর নভেম্বরের ১২ তারিখে তোলেন মোহাম্মদ পনির হোসেন।

ছবিগুলো তোলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পনির হোসেন বিবিসিকে বলেন,“ছবিগুলো যখন তুলি তখন আমি আমার আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। কিন্তু হোটেলে ফিরে এডিট করতে গিয়ে ল্যাপটপে যখন ছবিগুলো দেখলাম তখন আর আমার পক্ষে আবেগ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মানুষের কষ্ট কতরকম এটা রোহিঙ্গা ইস্যু কভার না করলে বুঝতে পারতাম না।”
”শখের বশে ২০১০ সাল থেকে পনির হোসেন ছবি তুলতেন।তিনি মনে করেন “মানুষ যখন কোনো দুর্দশায় পড়ে বা জীবনে কোনো সংকট তৈরি হয় তখনই আমাদের মতো ফটোসাংবাদিকদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়। যেমন রোগী না থাকলে ডাক্তারের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ নেই, আমাদের জন্যেও বিষয়টা একই রকম।”