বিশ্বরূপ দে। আসন্ন পুরসভা নিবার্চনের অন্যান্য বাকি সমস্ত প্রার্থীর মতো ইনিও, মধ্য কলকাতার ঐতিহ্যবাহী বনেদি এলাকা ৪৮ নং. ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস- এর নব নির্বাচিত থী। যার নাম প্রকাশ করাকে কেন্দ্র করেই মূলত অন্যান্য সব দলের তুলনায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে বেশ কয়েক ঘন্টা সময় দেরি হয়েছিল। এমনই উবাচ বিভিন্ন সূত্রের।
হার-জিত আছেই। তবে, যার মস্তিস্ক প্রসূত উপদেশ সারা বিশ্বের ২২ গজের পিচকে কাঁপিয়ে দিল দীর্ঘ সময় ধরে এবং এখনও যা বর্তমান; তার কাছে একটি ওয়ার্ড ও তার উন্নয়ন সর্বোপরি মানুষের পাশে থাকা খুব একটা কঠিন বিষয় হবে বলে মনে করেন না প্রার্থী তথা সাধারণ মানুষ।
বাবা ভূপেন্দ্র কুমার দে- ও (হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী, সিএবি- র সচিব) এই ৪৮ নং. ওয়ার্ডেরই এক সময়কার জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। প্রপিতামহ ছিলেন, এশিয়ার প্রথম ডক্টর অফ মেডিসিন। শুধু তাই নয়; তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়- এর সঙ্গে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
খেলার সফলতম জগত থেকে এবার রাজনীতিতে হাতেখড়ি বিশ্বরূপ - এর।
পারিবারিক ইতিহাসের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বিশ্বরূপ দে (হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী, সিএবি-র সচিব) নিঃসন্দেহে বলাই যায়।
৪৮ নং. ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ থেকে সাংসদ, বিধায়ক, গত ১০ বছর এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (বর্তমানে ৪৮ নং. ওয়ার্ডের সভাপতি) ও অন্যান্য রাজনীতিবিদরা খেলার জগৎ থেকে রাজনীতিতে প্রথম মুখের কাউন্সিলর প্রার্থীকে নিয়ে আগামীদিনের সার্বিক উন্নয়নে কতটা আশাবাদী ও মানুষের কী বক্তব্য; এই নিয়েই নির্বাচন ও তার ফল প্রকাশের আগে জন সমীক্ষা প্রকাশ করা হল:
সরাসরি প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটু প্রার্থী প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলে নিই। ইতিমধ্যে একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নব নির্বাচিত প্রার্থী বিশ্বরূপ দে।
প্রার্থীর একটাই কথা: মানুষ যদি ওনার প্রতি আস্থা - ভরসা রেখে ওনাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন; তবে উনি সমাজসেবী হিসাবে যেভাবে মানুষের সঙ্গে ছিলেন সেভাবেই "সবার আগে সবার পাশে" উন্নয়নের লক্ষ্যেই অবিচল থাকবেন। বিগত ১০ বছর এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সাংসদ, বিধায়ক সর্বোপরি যে জন্য বলা ভাল যার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান সেই "স্পিরিট ওম্যান" মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা - পর্যালোচনা করেই উন্নয়নের কাজ করবেন।
ওনার হয়ে প্রচার, মিছিল, রোড শো করেছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাইপো তথা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, চৌরঙ্গী বিধানসভার বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, চৌরঙ্গী লোকসভার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক তথা উত্তর কলকাতার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তাপস রায়, বিগত ১০ বছরের ৪৮ নং. ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ, প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্র (ছোড়দা)- র স্ত্রী শিখা মিত্র ও বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ প্রমুখ সকলেই করেছেন।
রবি শাস্ত্রী, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিষেক ডালমিয়া সকলেই তার "রাজনীতির ইনিংস" - এর শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন।
৪৮ নং ওয়ার্ডের সব প্রার্থীরাই উন্নয়নের প্রতশ্রুতি দিচ্ছেন। তাহলে ঠিক কেন আলাদা প্রার্থী বিশ্বরূপ দে?
এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক:
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (সাংসদ): বিশ্বরূপ শুধু কাজের মানুষ নন, খুবই আন্তরিক, অকপট, রক্ষণশীল মানুষ। কাজের বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। ওর নেতৃত্বাধীন ছেলেমেয়েদের - ও সেভাবেই তৈরি করেছে ও। আগামীদিনে ওর জন্য শুভেচ্ছা রইল।
নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় (বিধায়ক): বিধানসভা ভোটের সময় থেকে বিশ্বরূপ কে নয়; কোভিড এর সময় বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমাজ সেবা করার সময় থেকে আমি বুঝেছি, যে মানুষ সারা বিশ্বের ক্রিকেটকে সামলাতে পারে সে এই কাজ আর পাঁচজনের থেকে আলাদা ও চমকপ্রদভাবেই করবে। কখনও ওর আন্তরিকতার খামতি দেখিনি। বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখিনি। ইয়াশ ঝড়ের সময় দিনের পর দিন মাসের পর মাস সাধারণ মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন। বহু মানুষ আমি আমায় এসে জানিয়েছেন, যেই বিশ্বরূপ - এর কাছে যায় খালি হাতে বা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফেরেনি। কারোর বাড়িতে বাচ্চার দুধ লাগবে, কারোর জন্ডিস হয়েছে, কারোর পরিজন মারা গিয়েছেন। কার ঠিক কী প্রয়োজন জেনে তাকে সেটাই পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বরূপ দে -কে মানুষ ভরসা করলে ৪৮ নং. ওয়ার্ডে আরও উন্নয়ন হবে আগামীদিনে।
সত্যেন্দ্রনাথ দে (বিগত ১০ বছরের ৪৮ নং. ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বর্তমানে সভাপতি): বিশ্বরূপ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ওর জন্য আমার শুভকামনা রইলো।
তাপস রায় (বিধায়ক তথা উত্তর কলকাতার তৃনমূল কংগ্রেসের সভাপতি): বিশ্বরূপ ও আমি একই এলাকার মানুষ। বহুদিন ধরে আমরা একে অপরকে চিনি। কোনোদিন কাজ বা ব্যবহারিক আন্তরিকতায় ওর খামতি নজরে আসেনি। আসন্ন নির্বাচনে ওর জন্য অনেক শুভকামনা রইল। মানুষের প্রতিশ্রুতি ও রাখতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস।
যখন কোভিড কী মানুষ জানেই না। হঠাৎই মানুষ কর্মহীন, গৃহবন্দি। মাস্ক ও স্যানিটাইজার- ই একমাত্র "রক্ষাকবচ"; সেই সময় আইনজীবী তথা সমাজসেবী বিশ্বরূপ দে ৪৮ নং. ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ির প্রতিটা ঘরে পৌঁছে মানুষের হাতের ওপর ভরসার হাত রাখেন। আজও যা বর্তমান।
নিজের ব্যক্তিগত ফোন নং দিয়ে মানুষকে বলেছিলেন, "আজ থেকে বিশ্বরূপ দে আপনাদের পাশে সবসময় থাকবে।" তখনও গায়ে রাজনীতির রং লাগেনি। খেলার দুনিয়ার মানুষ, সিএবি- র প্রাক্তন সচিব ও বর্তমানে ক্রিকেট খেলার উপদেষ্টা, হাইকোর্ট - এর আইনজীবী সর্বোপরি শতাব্দী প্রাচীন "রেফিউজ" অনাথ আশ্রম-এর একজন বিশিষ্ট মানুষ হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক প্রার্থীকে নিয়ে কী বলছেন সাধারণ মানুষ----
বৌবাজার বস্তাপট্টি, ছানা পট্টি, স্বর্ণ ব্যসায়ীরা:
একবার নয় একাধিক বার আমাদের দোকানে, বাড়িতে সেই করোনার সময় থেকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছে। কথা দিয়েছে যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থাকবে নিজে। এমন তো সবার কাছেই শুনি। কিন্তু বিশ্বরূপ দা - কেই দেখলাম রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই কিভাবে দিনের পর দিন মহামারী, ইয়াশ ঝড়ের দাপট নিজে রাস্তায় নেমে সামলেছেন। ওর বাবাও সাধারণ গরীব মানুষকে আশ্রয় দিতে গড়ে তুলেছিলেন "রিফিউজ"। যার দ্বারা বহন করছে একা বিশ্বরূপ ও এখন তার ছেলেমেয়েরা।
বিশ্বরূপ দা এলাকায় "দাদা" বলেই পরিচিত। রাজনীতির রং গায়ে লাগার আগেই "সকলের কাছের দাদা" হয়ে উঠেছেন বিশ্বরূপ দে।
মানুষ কোন পরিষেবা পায়নি!
১. দিনরাত্রি বিনামূল্যে
অ্যাম্বুলেন্স।
২. দিনরাত্রি বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিষেবা কোভিড রোগীর জন্য। বিশ্বরূপ দা- র লোকজন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন।
৩. বিনামূল্যে কোভিড-এর টিকাকরন।
৪. প্রতি রবিবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির।
৫. চ্ক্ষু পরীক্ষা ও বিনামূল্যে চশমা প্রদান।
৬. মাধ্যমিক - উচচমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পেপার বিতরণ।
৭. মাধ্যমিক - উচচমাধ্যমিক- এ সফল ছেলেমেয়েদের বই, খাতা বিতরণ।
৮. শিশু দিবস পালন।
৯. নিয়ম নিষ্ঠায় দুর্গা পুজোর আগে ৪৮ নং. ওয়ার্ডের সব বাড়িতে নিজে গিয়ে সধবা মহিলাদের আলতা, সিঁদুর; বিধবা মহিলাদের উপহার সামগ্রী দিয়েছেন, পুজোর সপ্তমীর দিন সব বাড়িতে মালসায় করে খিচুড়ি, তরকারি, পায়েস ভোগ পাঠিয়েছেন, পুজোর চারদিন সকলকে রেফিউজ- এর দুর্গা পুজোয় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ও বসে খাইয়েছেন। বিজয়া দশমীর পর সকলের বাড়ি গিয়ে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম, সমবয়সী বা ছোটদের বড় দাদা - ভাইদের সঙ্গে কোলাকুলি করে বিজয়া সেরেছেন। এখানেই শেষ নয়, বিজয়ার খাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। নিজে দাড়িয়ে থেকে সকলকে বসে খাইয়েছেন। এর পর লক্ষ্মী পুজো, কালী পুজোর আগে ওয়ার্ডের সব বাড়িতে প্রদীপ উপহার; ছট পুজোর আগে ৪৮ নং. ওয়ার্ডের যারা ছট পুজো করেন তাদের সবার বাড়িতে নিজে গিয়ে পুজোর সামগ্রী ও নতুন কাপড় উপহার হিসাবে হাতে তুলে দিয়েছেন, বড়দিনের আগে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার ও পেন দিয়ে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিশিষ্ট ডাক্তার:
আজ নির্বাচনে বিশ্বরূপ দে প্রার্থী হওয়ায় আমরা খুবই আশ্বস্ত বোধ করছি। আগামীদিনের জন্য শুধু নয় "লাইফটাইম কাউন্সিলর" হিসাবেই আমরা বিশ্বরূপ দে কে পেতে চাই।
শিল্পী: মনে মনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছি যেন বিশ্বরূপ দা - ই প্রার্থী হন।
পুলিশ অফিসার: এক ফোনে বিশ্বরূপ"- কেই আমরা ভরসা করছি।
প্রবীণ নাগরিক: রোজ বিশ্বরূপ - এর নাম করে নারায়ণ - এর পায়ে তুলসী পাতা দিই। ভগবান ওর অনেক ভাল। ও আরও মানুষের ভালবাসায় ভরে উঠুক।
প্রার্থী বিশ্বরূপ দে বলছেন:
সমাজসেবী হয়ে মানুষের পাশে ২৪ ঘন্টা, ৩৬৫ দিন আমি ও আমার ছেলে - মেয়েরা যেভাবে প্রতিনিয়ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের গলি থেকে পাড়া ও এলাকায় পাশে ছিলাম; ঠিক একইভাবে সবার আগে সবার পাশে আগামীদিনেও থাকব।
নির্বাচনী প্রচারে বেড়িয়ে মানুষের কাছে আশীর্বাদ, স্নেহ ও ভালবাসা চেয়ে নিচ্ছি।
"রেফিউজ" :
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় হাজার অনাথ ছেলে-মেয়ে থেকে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক, উচচমাধ্যমিক পাশ করে। পড়াশোনার পাশাপাশি গান, নাচ, আঁকা, খেলাধুলা যার যে বিষয়ে আগ্রহ সে সেটাই এই আশ্রমে থেকে শিখতে পারে। যেখানে "নিয়ম শৃঙখলা" লঙ্ঘন গর্হিত অপরাধ। এখানে থেকে বহু আবাসিক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বিশ্বরূপ দে। শুধুই অনাথ ছেলে-মেয়ে নয়; বয়স্ক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত মহিলা যাদের পরিজন "পরিত্যাগ" করেছেন, তাদের জন্যও এই "রেফিউজ"-এ "মহিলা মহল" তৈরি করেছেন তিনি।
যিনি জগমোহন ডালমিয়া থেকে সুনীল গাওয়াস্কার রবি শাস্ত্রী, অজয় জাদেজা, রাহুল দ্রাবিড়, মহম্মদ আজারুদ্দিন, বিরাট কোহলি- র সঙ্গে একই ২২ গজে থেকে খেলার উপদেষ্টা- র ভূমিকা পালন করেছেন ও করছেন; তাঁর কাছে এই "খেলা হবে"-র খেলা শুধু "রাজনীতির লড়াই" নয় "স্নায়ুর লড়াই"।