করোনা ভাইরাস। এই একটি মাত্র শব্দের কাছে এখন প্রায় নতজানু হয়ে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। করোনা ভাইরাস শব্দটি এসেছে লাতিন করোনা শব্দ থেকে। যার অর্থ-মুকুট। কেননা, ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এই ভাইরাসটি দেখতে অনেকটা মুকুটের মতো। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ নভেল করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত।
করোনা ভাইরাসের আক্রমণ যে এই প্রথম দেখছে বিশ্ববাসী, তা কিন্ত্ত নয়। আজকের এই করোনা ভাইরাস আতঙ্কের আগেও ২০০২ সালে চিনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স অর্থাৎ সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রাম নামে এই ভাইরাসের সংক্রমণে সারা পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮ হাজার ৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন। সেটি ছিল এই করোনা ভাইরাসেরই একটি ধরন। আবার সেই চিন থেকেই ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ গোটা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। তাগা-তাবিজ বাঁধা বা গো-মূত্র পান করে নয়, বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়েই মানুষ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে।
আর তাই করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে মানুষ নিরলসভাবে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাতে এই সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার জন্য সামাজিক দূ্রত্ন বজায় রেখে চলার উপরেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে অনিবার্যভাবেই। আর তাই ভিন রাজ্য বা ভিন জেলা থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারান্টিনে রাখছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। ভিন রাজ্য ও ভিন জেলা থেকে আগত বেশকিছু পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করে বীরভূম জেলা প্রশাসন তাদের কোয়ারান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করেছে। এদের মধ্যে উত্তর প্রদেশ ও কলকাতায় কাজে যাওয়া বেশকিছু শ্রমিক রয়েছেন। মুর্শিদাবাদের বেশকিছু ফেরিওয়ালা গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশে। এদের বাড়ি ধুলিয়ানের হিজলতলায়। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে যানবাহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তারা সেখান থেকে ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত আনাজের গাড়িতে আসেন। সেখান থেকে অন্য একটি গাড়িতে বাড়ির উদ্দেশ্যে আসার সময় বীরভূম-বর্ধমান সীমান্তে গাড়িতে পুলিশি তল্লাশির আগে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে তারা বোলপুরে পৌঁছালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। একইভাবে বীরভূম থেকে কলকাতায় রাজমিস্ত্রীর কাজে যাওয়া বেশকিছু শ্রমিক পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার সময় ঢুকে পড়েন শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী চত্ত্বরে। বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের প্রথমে আটকে রেখে খবর দেয় পুলিশে। পুলিশ এসে এদের সকলকেই নিয়ে যায়। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূৃমের আটক এইসব মানুষদের নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে বোলপুরের পার্শ্ববর্তী বাহিরীর কোয়ারান্টিনে। এদের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় এদের পরিবারের লোকজনও আসতে পারেননি। আবার এরা এখান থেকে ছাড়া পেয়ে কবে, কী ভাবে বাড়ি পৌঁছাবেন সেই চিন্তাতেই এরা অস্থির হয়ে উঠেছেন। চব্বিশ জন শ্রমিককে এখানে এনে রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।।