আবার খবরে কানপুর। কানপুরেই এনকাউন্টারে মৃত্যু হল গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের। পুলিশ সূত্রে খবর, উজ্জয়িনী থেকে গ্রেফতার করার পর বিকাশকে শুক্রবার সকালে নিয়ে আসা হচ্ছিল কানপুরে। সেইসময় পুলিশের তিনটি গাড়ির মধ্যে একটি হাইওয়ের উপর দুর্ঘটনায় পড়ে। সূত্রের দাবি, দুর্ঘটনার কবলে পড়া গাড়িটিতেই ছিল বিকাশ। দুর্ঘটনায় গাড়িটি উল্টে গেলে সে পালানোর চেষ্টা করে। তখনই উত্তরপ্রদেশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের গুলিতে মৃত্যু হয় তার। বেশ কয়েকটি গুলি তার শরীরে লাগে।
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের ৮ পুলিশকর্মীর খুনে অভিযুক্ত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকে প্রায় সাতদিন ধরে খুঁজে বেড়ানোর পর বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই একদিকে যখন তাকে গ্রেফতার করছিল পুলিশ, তখনই দুটি আলাদা এনকাউন্টারে মারা যায় তার দুই ঘনিষ্ঠ সাগরেদ। আরও এক সহযোগী অমর দুবেরও বুধবারই মৃত্যু হয় এনকাউন্টারে।
খুন, অপহরণ, তোলাবাজি, দাঙ্গা লাগানো সহ ৬০টি মামলা ছিল বিকাশের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার কানপুরের চৌবেপুর এলাকার বিক্রু গ্রামে তাকে গ্রেফতার করতে গেলে পাল্টা হামলায় বিকাশের বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয় আট পুলিশকর্মীর। ওই ঘটনার পর থেকেই তোলপাড় শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। পুলিশ-প্রশাসন থেকে রাজনীতির অলিতেগলিতে যে বিকাশের শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা কম নয়, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। বিকরু গ্রামে পুলিশ তাকে ধরতে যাচ্ছে, সেই খবর সে আগেভাগেই পেয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। এরপরই বদলি-সাসপেন্ডের ঢল নামে পুলিশের বিভিন্ন স্তরে। তারপর থেকেই পুলিশে চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল বিকাশ। তার মাথার দাম আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করে পুলিশ।
অবশেষে বেপাত্তা ডন বৃহস্পতিবার ভিআইপি পাস নিয়ে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিল। এদিন সকাল সাতটা নাগাদ মন্দিরের পিছনের গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকে সে। পুজোর উপাচার কিনতে গিয়ে মুখ থেকে মাস্ক খুললে বিকাশকে দেখে চিনতে পারেন মন্দিরের সামনের এক ফুলবিক্রেতা। ওই ফুলবিক্রেতা মন্দিরের নিরাপত্তা কর্মীদের জানালে পুলিশ প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর মন্দিরের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, গ্রেফতারির পরও তার মেজাজ ছিল ডনের মতোই। তখনও তাকে ধমকাতে-চমকাতে দেখা যায়।
এদিকে এহেন গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের এনকাউন্টারে মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধীরা। গ্যাংস্টারের রাজনৈতিক আশ্রয়দাতাদের বাঁচাতেই তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার। পাশাপাশি যোগী সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব।
শুক্রবার সকালে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘অপরাধী তো শেষ হল। কিন্তু অপরাধ ও তার মদতদাতাদের কী হবে?’
কংগ্রেসের আর এক শীর্ষ নেতা দিগ্বিজয় সিং ট্যুইটে লিখেছেন, ‘আশঙ্কা সত্যি হল। বিকাশ দুবের মদতদাতা রাজনীতিক এবং পুলিশের আধিকারিকের নাম আর জানা যাবে না। গত ২-৩ দিনে বিকাশ দুবের দুই সঙ্গীকেও এনকাউন্টারে খতম করা হয়েছে। কিন্তু তিন এনকাউন্টারের প্যাটার্নই একই ধরনের কী ভাবে হল?’
অপরদিকে, সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব এ প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আসলে, গাড়ি উলটায়নি। সত্যিটা বেরিয়ে এলে উত্তরপ্রদেশে সরকার উলটে যেত, তা থেকে তারা রক্ষা পেল।’
এ দিকে এনকাউন্টার নিয়ে কানপুর পুলিশের বক্তব্য, পুলিশ ভ্যান দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর পালানোর চেষ্টা করে বিকাশ। এক পুলিশকর্মীর বন্দুক ছিনিয়ে নেয় সে। পুলিশের দাবি, সেই সময় বিকাশকে আত্মসমর্পণ করতে বললে সে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায়। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে গুরুতর আহত হয় সে। পরে তার মৃত্যু হয়।