সন্ত্রাস দমনে বড়সড় সাফল্য পেল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের এক শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিনের এক শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। অভিযুক্ত জঙ্গি নেতার নাম আবদুল করিম ওরফে বড়ো করিম। ২০১৭ সাল থেকে একাধিক সন্ত্রাসবাদী কাজে যুক্ত থাকার চার্জ রয়েছে করিমের মাথার ওপর। ভারত ও বাংলাদেশ, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পুলিশ খুঁজছিল আবদুল করিমকে। শুক্রবার ভোরে মুর্শিদাবাদের সুতি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত আবদুল করিম ভারতীয় নাগরিক। তাকে শুক্রবার স্থানীয় আদালতে পেশ করা হয়। যদিও এখনো পুলিশের জালে জেএমবি-র তিন শীর্ষ নেতার মধ্যে অধরা আরও দুই নেতা।
We can FORGET all our WORRIES as India seem to have truly ARRIVED at the global stage. We now have President of United States informing the world about the MOOD of our Prime Minister!!
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) May 29, 2020
মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেফতার জেএমবি-র শীর্ষ জঙ্গিনেতাI জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ(জেএমবি)-র এ রাজ্যের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক আবদুল করিম ওরফে বড় করিমকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। দেশের অন্যতম তিন ‘ওয়ান্টেড’ জেএমবি জঙ্গির মধ্যে আবদুল করিম একজনI বৃহস্পতিবার সুতি থানা এলাকা থেকে এসটিএফ ও জেলা পুলিস একযোগে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেI
এসটিএফ সূত্রে খবর, ধুলিয়ান মডিউলের প্রধান ছিল সে। বাংলাদেশ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ছিল তার। কলকাতা পুলিসের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স ২০১৮ সালে আবদুল করিমের বাড়িতে হানা দেয়I সেই সময় তার বাড়ি থেকে প্রচুর জেহাদি বই, বিস্ফোরক উদ্ধার করেI কিন্তু পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে সেসময় পালিয়ে যায় বড় আবদুল করিমI ২০১৮ সাল থেকেই বড় আবদুল করিমের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন গোয়েন্দারা।
সংগঠনের অর্থ জোগাড় থেকে বিস্ফোরক সরবরাহ এবং ‘লজিস্টিক’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল তাঁর। বর্তমানে তিনি সংগঠনের প্রধান সালাউদ্দিন সালেহিনের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে দলাই লামার বুদ্ধগয়া সফরের সময় সেখানে বিস্ফোরণের ছক কষে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পিছনে থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি। ততদিনে জেএমবি-র সংগঠন দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে এবং সালাউদ্দিন সালেহিন, জহিদুল ইসলাম-সহ শীর্ষ নেতারা ভারতে সংগঠন বিস্তার করা শুরু করেছে। খাগড়াগড়ের সঙ্গে সঙ্গে বেলডাঙা, বীরভূমের সমস্ত মডিউল ভেঙে যাওয়ায়, তারা নতুন নিয়োগ করা যুবকদের নিয়ে তৈরি করে ধূলিয়ান মডিউল।
মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সূতি-সহ জঙ্গিপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেই সংগঠন তৈরি হয়। ধূলিয়ান মডিউলকেই ব্যবহার করা হয় বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ধূলিয়ান মডিউলের অন্যতম চাঁই পয়গম্বর শেখ এবং জমিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। সেই সময় তল্লাশি চালাতে গিয়ে সামশেরগঞ্জে আবদুল করিমের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট-সহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক। কিন্ত গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় করিম। ধরা পড়ে মডিউলের আরও এক সদস্য ছোট করিম। এর পর বিভিন্ন সময়ে ধূলিয়ান মডিউলের বিভিন্ন সদস্য পাকড়াও হয়েছে। কিম্ত অধরা থেকে যায় বড় করিম।
গোয়েন্দাদের দাবি, এই দুই বছরে জেএমবি-র সংগঠনে অনেক পরিবর্তন হয়। জহিদুল ওরফে কৌসরের সঙ্গে সালাউদ্দিনের আদর্শগত বিরোধ থেকে এদেশের জেএমবি সংগঠনেও আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায়। দক্ষিণ ভারত থেকে একে একে ধরা পড়ে কৌসর এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা। গত বছরের গোড়ার দিকে সালাউদ্দিন তৈরি করে জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দ অর্থাৎ জেমবি-র ভারতীয় শাখা।
এসটিএফের দাবি, গত কয়েক বছরে বড় করিম বাংলাদেশেও জেএমবি-র সালাউদ্দিন গোষ্ঠীর লোকজনদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করেছে এবং বৈঠক করেছে। করিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সালাউদ্দিন এবং বাংলাদেশে জেএমবির অন্য এক শীর্ষ নেতা মাস্টারের। এরা দু’জন ২০১৫ সালে করিমের বাড়িতেও থেকে গিয়েছেন। এসটিএফের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে পাওয়া শীর্ষ এবং সক্রিয় জেএমবি নেতাদের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে করিমের নাম।”
তবে এখনও গত প্রায় আড়াই বছর ধরে করিমের গতিবিধি সম্পর্কে কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। তবে এ টুকু জানা গিয়েছে, করিম এই মূহুর্তে সংগঠনের তৃতীয় শীর্ষ নেতা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগেই মুর্শিদাবাদে ফেরে করিম। এই ক’বছর কেরল, তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়ে গা ঢাকা দিয়েছিল সে। সম্ভবত কোভিড আতঙ্কের জেরে বা লকডাউনে বিপাকে পড়ে সম্প্রতি নিজের এলাকায় ফেরে করিম। এক এসটিএফ কর্তার কথায়, ‘‘খবর পেয়ে আমরা প্রথমে সামশেরগঞ্জে করিমের বাড়িতে তল্লাশি চালাই। সেখানে সে ছিল না। আরও পাঁচটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সূতি থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে করিমকে পাকড়াও করা হয়েছে।” করিমের গ্রেফতারির পর গোয়েন্দাদের দাবি, সংগঠনের বাকি দুই নেতা সালাউদ্দিন এবং মিন্টু খানকে পাকড়াও করা সম্ভব হবে।
তবে গোয়েন্দাদের অনুমান, লকডাউনে কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফেরা শুরু করতেই বিপাকে পড়ে করিম। তাই ভিনরাজ্যের ডেরা থেকে ফিরে এসেছে করিম। তবে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। সে বাসে বা ট্রাকে করেও ফিরতে পারে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের।